আকাশ বন্যায় চারিদিকে পানি থইথই করছে।সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদ গুলিতে এক ইঞ্চি মাটিও জেগে নেই। এ অবস্থায় এক প্রসূতির বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে ইঞ্জিন চালিত নৌ ট্রলারেই সন্তান প্রসব করেছে বলে জানা গেছে।
মধ্যরাতে প্রসব যন্ত্রণা ওঠে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ইমরান হোসেনের স্ত্রী কেয়ামনির (২০)। দ্বীপ ইউনিয়ন হওয়ায় ইচ্ছা করলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব নয়। একই সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে । এই দ্বীপ ইউনিয়নে সচরাচর মোটরসাইকেলই একমাত্র যানবাহন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পানিতে তাও চলার জো নেই।
ওদিকে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রসূতি। পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ধাত্রী দিয়ে শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সব চেষ্টাই যখন বিফলে যাচ্ছে, তখন উপায়ন্তর না পেয়ে স্বামী-শ্বশুর মিলে বাগে করে (ভারী জিনিস ঘাড়ে বহনযোগ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি শক্ত লাঠি ) কেয়ামনিকে নিয়ে রওনা হন খোলপেটুয়া নদীর পাতাখালী খেয়াঘাটের দিকে। সঙ্গে ছিল ধাত্রী সহ অন্যান্য সঙ্গীরা।
খেয়াঘাটে পৌঁছে নিজেদের ট্রলারে রওনা হন নঁওয়াবেকী ঘাটের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে সড়কপথে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হবে আরও ১২ কিলোমিটার। এরই মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রলারেই ফুটফুটে সন্তান প্রসব করেন কেয়ামনি।
কেয়ামনির শ্বশুর ইব্রাহিম হোসেন জানান, বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ আছে। এর পরও তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে খেয়াঘাটে পৌঁছে কয়েক ঘণ্টা নদীপথ পাড়ি দিয়ে স্থলভাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে আরও ১০-১২ কিলোমিটার যেতে হয়। চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ হওয়ায় নেই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, মেলে না চিকিৎসাসেবা। মাঝে মধ্যেই নদীপথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ট্রলারে সন্তান জন্ম দেন অনেকে, আবার অনেক সময় জীবনহানির ঘটনাও ঘটে। অনেকে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে রক্তক্ষরণেও মারা যান। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ থাকে না।’
শুধু কেয়ামনি নন, এ যেন উপকূলের দৈনন্দিন চিত্র, জীবন-মৃত্যুর খেলা। একদিকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, অন্যদিকে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন উপকূলবাসী।