কেশবপুর উপজেলার কুটির শিল্পের গ্রাম খ্যাত আলতাপোল। এ গ্রামের প্রায় ২ হাজার নারী ও পুরুষ কুটির শিল্পের সাথে জড়িত থেকে সংসার চালিয়ে আসছেন। এসব পরিবারে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জীবিকায়ন শিল্প পল্লী।
এ পল্লীর প্রায় ৬শ’ পরিবার সরকারি অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহায়তায় নিজেদের ব্যবসার উন্নয়ন করার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে তারা ঘুরে দাঁড়াবেন এমনটি আশা করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় যশোরের কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামকে কারুশিল্প পল্লী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।জানা গেছে, উপজেলার আলতাপোল গ্রামে কাঠ দিয়ে তৈরি হয় মোমদানি, ফুলদানি, কলস, বাটি, পাউডার কেস, বয়াম, ডিম সেট, আপেল সেট, হারিকেন, পেন্সিল ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে, ব্যাংক, সিঁদুর বাক্স, ধামাপাতি, কয়েরদানি, টিফিন বক্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তৈরি এ কুটির শিল্প এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪শত কারখানা। এ সমস্ত কারখানায় । অর্থাভাবে থাকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষের সংসারে কুটির শিল্পের মাধ্যমে এসেছে স্বচ্ছলতা। আর এ দিয়ে তাদের জীবনযাপন চলে।কেশবপুরের আলতাপোল গ্রামে কাঠজাত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও বাজার প্রসারের লক্ষে এক পণ্য এক পল্লী ভিত্তিক ‘বিআরডিবির জীবিকায়ন শিল্প পল্লী’ গড়ে উঠেছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য শিল্প পল্লী’ উদ্বোধন করেন ১ এপ্রিল।এ পল্লীর প্রায় ৬শ’ পরিবার সরকারি অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহায়তায় নিজেদের ব্যবসার উন্নয়ন করার সুযোগ পাবেন।কেশবপুরের আলতাপোল গ্রামেরই কয়েকজন বেকার যুবক নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় প্রথমে একটি কুটির শিল্পের কারখানা স্থাপন করে। শুরু হয় আলতাপোল গ্রামে কুটির শিল্পের যাত্রা। বর্তমানে এ গ্রামের প্রায় ৪শত কারখানায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। প্রতিমাসে শ্রমিকদের আয় হয় প্রায় ছয় হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। কাঠ সরবরাহের কাজে জড়িত শতাধিক মানুষ। এরা সবাই এখন অর্থনৈতিক সচ্ছলতায় ফিরে পেয়েছেন স্বাবলম্বীতা।সরজমিনে দেখা যায়, প্রথমে কাঠ ক্রয় করে সমিলের সাহায্যে লগ তৈরি করা হয়। এরপর এই লগগুলো কুটির শিল্পের বিভিন্ন কারখানায় মেশিনের সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করছেন শ্রমিকরা। এখানকার তৈরি কাঠের উপকরণগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রতিনিয়ত সরবরাহ করা হয়। সরোজমিন গিয়ে কথা হয় আলতাপোলের কুটির শিল্পর মালিক ওয়েদ বিশ্বাস এ সাথে । তিনি বলেন, আমাদের এখানে পেন্সিলদানি, ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, বয়েম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে, ব্যাংক, ধামাপাতি, কয়েরদানি, টিফিন বক্সসহ প্রায় শতাধিক রকমের উপকরণ তৈরি করা হয়। ১৭ জন শ্রমিক প্রতিদিন এ কারখানায় কাজ করেন। কুটির শিল্পর মালিক রবিউল ইসলাম বলেন এখনকার তৈরী ফুলদানি, চরকা, খুনতি, হামাম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে চাহিদা বেশি । ৭ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করে। কাজের মুজুরী হিসেবে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন শ্রমিকেরা। পারুল বেগম , ডালিম হোসেন বলেন কাজ হিসাবে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।শ্রমিক আলতাপোলের পরিমল দাস, মাসুদ সরদার, আমজেদ সরদারসহ অনেক শ্রমিক গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। কুটির শিল্প মালিক মোশারফ হোসেন দুলু জানান উৎপাদিত পণ্যগুলো বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে ফেনী, রংপুর, কুমিল্লা ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট এলাকায় বেশি সরবরাহ করা হয়। কুটির শিল্প উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক হাজার শ্রমিক।এ ব্যাপারে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার সুজন কুমার চন্দ্র বলেন বিআরডিবি জীকিকায়ন শিল্প পল্লীর আওতায় তাদের সমস্যাসমূহ চিহিৃত করে প্রয়্জেনীয় প্রযুক্তি , প্রশিক্ষণ ও মূলধন সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রমোশনাল সহায়তা প্রদানপূবক তাদের জীবিকায়নকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীতকরণে গুরত্বপূণ ভূমিকা পালন করবে।