কেশবপুরে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। বর্তমান গ্রাম বাংলা থেকে গরম্নর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলে/মেয়েরা।
কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরম্নর গাড়ি নামক শব্দটিও। গ্রামের পথে গরম্নর গাড়ি, বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি। কথাটি কবিতার লাইন হলেও এক সময় তা বাস্ত্মব ছিল। এমন দৃশ্য এখন অবাস্ত্মব ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে গেলেও এখন এমন গরম্নর গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন গ্রামের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল এই গরম্নর গাড়ি। সেটি খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। ২৫/৩০ বছর আগেও এইসব গরম্নর গাড়ির কদর ছিল অনেক বেশী। কিন্তু এখন কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গরম্নর গাড়ি। হয়তো খুব খুঁজে দু’একটি গরম্নর গাড়ি পাওয়া যাবে কেশবপুরের গ্রামাঞ্চলে। আজকের দিনে বিলুপ্ত প্রায় সকল গরম্ন গাড়ি। এক সময় গ্রাম বাংলায় নতুন ধান কাটার নবান্নের উৎসবের সময় গরম্নর গাড়ি প্রতিযোগিতার খেলা হত। গ্রামের মানুষের কাছে নির্মল আনন্দের উপকরণ ছিল এই খেলা। কার গাড়ি আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা হত খোলা মাঠে। এই খেলাটিও হারিয়ে গেছে আজ কালের আবর্তে। মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই, ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন গরম্নর গাড়ি কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। যান্ত্রিক আবিস্কার ও কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির ছোয়া লাগার কারণে গরম্নর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, বাস, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি। কৃষকসহ সর্ব শ্রেণীর মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্যএ সকল যান্ত্রিক পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানা ধরনের গরম্নর গাড়ি। এখন গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো গরম্ন গাড়ি তেমন চোখে পড়ে না। এ কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরাও গরম্ন গাড়ি শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। বেশির ভাগ রাস্ত্মাঘাট পাকা হওয়ার কারণে গরম্নর গাড়ি আর চালানো সম্ভব হয় না। তবে মাঠ থেকে ধান আনার ক্ষেত্রে বা গ্রামের দূর্গম এলাকায় ও রাস্ত্মা ঘাট ভালো না থাকায় গরম্নর গাড়ি ছাড়া ওখান থেকে জিনিসপত্র আনা নেওয়া করা সম্ভব হয় না। এ কারণে গরম্নর গাড়ির উপরই তাদের ভরসা। তবে আগামীদিনে গ্রামাঞ্চালের রাস্ত্মা ঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গরম্নর গাড়ি গুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন আর কোন গরম্নর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না। গরম্নর গাড়ি শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগেকার দিনে মানুষেরা বিয়ে-শাদি থেকে শুরম্ন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতো গরম্নর গাড়ির মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাচিনতম গরম্নর গাড়িটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষেরা মালামাল বহন, নবান্ন উৎসবে কৃষকদের ধান বহনকারী একমাত্র বাহক ছিল গরম্নর গাড়ি। এমন কি নতুন বৌ আনা-নেয়া করা হত গরম্নর গাড়িতে করে। পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেলা দেখতে যাওয়া গরম্নর গাড়িতে বসে গাড়ি ওয়ালার ভাটিয়ালী গান শোনা সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। কিন্তু বর্তমান গ্রাম বাংলা থেকে গরম্নর গাড়ি হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলে/মেয়েরা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই গরম্নর গাড়ি একদিন বইয়ের পাতায় জায়গা করে নেবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কেউ গরম্নর গাড়ি চিনবে না। গরম্নর গাড়ি ঐতিহ্যেরই একটা অংশ। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা হারাচ্ছি। কালের গতি ধারায় উন্নয়নের গতি থেমে নেই। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এরকমনানা ঐতিহ্য।