খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের উপর দিয়ে। বয়ে গেছে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড় ,প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রতিনিয়ত এই সড়কে ঝরছে তরুতাজা প্রাণ। সড়কটিতে মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই যন থামে না। সড়ক দূর্ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না যাত্রীসাধারা ও খুলনা মহাসড়কের দুইপাশ দিয়ে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা, স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার মোড়ল, আবুল হোসেন, আমজাদ হোসেন শেখ,মনে করেন স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান করা যায় । যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনা হাস পায়।
গত ৮ অক্টোবর ডুমুরিয়ার সড়কের ডুমুরিয়া মহিলা কলেজ মোড়ে ও জিলেরডাঙ্গা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খর্ণিয়া সেতুতে ট্রাকে ত্রিখণ্ডিত হয়ে এক বৃদ্ধ (৭০) নিহত হন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক গ্রাম্য চিকিৎসক নিহত হন। ১৮ মার্চ এ সড়কের কাঁঠালতলা বিশ্বাস বাড়ির সামনে ট্রাকের সঙ্গে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ডিজিএফআই কর্মকর্তা তারিয়েফ সুনাম দীপ (৩০) মারা যান। কাঠালতলায় পুলিশের গাড়ির সাথে সড়ক দুর্ঘটনায় খর্নিয়া গ্রামের একই পরিবারের তিনজন পঙ্গ বারণ করে অসহায় জীবন যাপন করছে , সম্প্রতি কয়েকদিন আগে গোলনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০জন গুরুতর আহত হন, আঠারো মাইল সড়ক দুর্ঘটনায় এক করিমন চালক নিহত হন। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের কানে ভেসে আসছে সড়ক দুর্ঘটনা আহত ও নিহত ব্যক্তিদের কান্না । প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে কারো না কারো প্রাণ ঝরছে।
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জাতীয় দলেন ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা। সাজ্জাদুল হাসান সেতু নামের প্রথম শ্রেণির আরেক ক্রিকেটারেরও মৃত্যু হয় এ দুর্ঘটনায়।
খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, চলতি বছরে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়ার অংশে। সেখানে প্রায় প্রতি তিনদিনে গড়ে একটি করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাদের পরিসংখ্যান মতে, চলটি বছরের শুরু থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে ৯৮৫টি। আর খুলনা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছ ২৯৮টি। এর মধ্যে শুধু খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া অংশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছ ৮৯টি। এতে ঘটস্থল থেকে ৭ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে তারা। এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ১৫১ জনকে। আহতদের অনেকে আবার হাসপাতালে মারা গেছেন, যার হিসাব পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে তারা ডুমুরিয়ার বালিয়াখালি সেতু,গুটুদিয়া মোড়,খর্ণিয়া বাজার, কাঁঠালতলা বাজার, ,চাকুন্দিয়া মাদ্রাসা ,সাতক্ষীরা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড সামনে থেকে চুকনগর বাজার, মালতিয়া কাঁচামালের আড়ৎ, শুভাশুনি মোড়, মদনপুর বাজার মোড় কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। এগুলো সব থেকে এখন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বিপদজনক এলাকা।
দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা আরো বলেছেন খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কটি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো রাস্তা নির্মিত হয়েছে আমরা বলতে পারি সড়কটিকে প্রশস্ত ও সংস্কার করার পর বেপরোয়া গতিতে চলছে যানবাহন। অদক্ষ ড্রাইভার, ফিটনেসবিহীন গাড়ী, ট্রাফিক আইনের কোনো ধারণা নাই ,সমান তালে চলছে থ্রী-হুইলার যানবাহন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে যাত্রীদের জীবন। কোনোভাবেই থামছে না তাদের দৌরাত্ম্য।এছাড়া অনুমোদনবিহীন নছিমন, করিমন, ট্রলি, ইজিবাইকও চলছে দেদারছে। গাড়ির গতি বেশি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে এ রাস্তায়। এসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাও উদাসীন।তাদের মতে, বাস-ট্রাক চালকদের ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন এবং হাইস্পিডে যে গাড়িগুলো চলে গতি নির্ধারক মেশিন দিয়ে চেকিং করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ সড়কটিতে অনেক মোড়। কিছু মোড় আছে যা দূর থেকে বোঝা দায়।
এদিকে কয়েকদিনের ব্যবধানে ডুমুরিয়ায় আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছেন উপজেলা প্রশাসন।দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত বোঝাই, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সহযোগিতায় রাস্তার কিছু গাছের ডালপালা কেটে রাস্তা দৃশ্যমান করার কাজ শুক্রবার থেকে শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর সমন্বয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সবাইকে প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলছে। বিষয়টি সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন বাড়ছে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে রাস্তায়, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে।লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকী অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হচ্ছে। মাদকাসক্ত চালকদের যানবাহন চালানো, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন, ঢিলেঢালা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আগে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, নিয়ম না মেনে ওভারটেকিং, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, পেছনের বাসকে সামনে আসতে না দেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে এ সড়কে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি ও গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।