ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালি মন্দির পরিদর্শনকে ঘিরে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। র্যাব ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা মহড়ায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে সব পক্ষের অংশ গ্রহনে সমন্বয় সভা করে সমগ্র আয়োজনকে নির্ভুল করার চেষ্টা চলছে।
মন্দির ও পাশ্ববর্তী সকল সংযোগ সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি গোটা এলাকাকে নুতন সাজে সাজানো হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকার প্রধানের এ আগমনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে প্রতিদিনই শ্যামনগরে ভিআইপিদের পদচারনা বেড়েই চলেছে। দেশী বিদেশী যে কোন প্রধানমন্ত্রীর যশোরেশ্বরী কালি মন্দির এলাকায় প্রথমবারের মত আগমনের ঘটনায় গোটা জনপদজুড়ে রীতিমত সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার যেয়ে দেখা গেছে হেলিকপ্টার অবতরনের জন্য নির্মিত ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও পাশ্ববর্তী শষ্যক্ষেত্রে মোট ৪ টি হেলিপ্যাড নির্মিত হয়েছে। অবতরণ ক্ষেত্র থেকে মন্দির পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দুই দেশের সরকার প্রধানের ছবিসহ নীতিবাক্য সংবলিত প্লাকার্ড স্থাপনের জন্য নিযুক্ত শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। ইতিপুর্বে বিদ্যালয় মাঠের হেলিপ্যাড হতে অনতিদুরে নির্মিত অপর তিনটি হেলিপ্যাড পর্যন্ত সড়ক ছয় ফুট প্রশস্থ করা হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তা আরও আড়াই ফুট প্রশস্থ করার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকজন। সোমবার ভারতীয় দূতাবাস কর্তারা পুনরায় হেলিপ্যাডস্থল পরিদর্শনের পর সড়কটি আট ফুটে উন্নীত করার পরামর্শ দেয় বলে জানা গেছে।
এদিকে নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে প্রায় প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালি মন্দির এলাকা পরিদর্শন করছেন।সার্বিক প্রস্ততি সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশনের খুলনা অঞ্চলের প্রতিনিধি কৌশিক রায় যশোরেশ্বরী মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন। ইতিমধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী সহ ভারতীয় এস পি জি এবং বাংলাদেশের এসএসএফ সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান, র্যাব এর মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার শ্যামনগর পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া মঙ্গলবার বিকালে হেলিকপ্টারযোগে ভারতীয় নিরাপত্তা দলের কিছু সদস্য মন্দির প্রাঙ্গনে পৌছায় বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে শোভাবর্ধনসহ সংস্কার কাজ সম্পন্নের পাশাপাশি যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা অপসারন করায় যশোরেশ্বরী কালি মন্দির নুতন এক রুপ লাভ করেছে। আশপাশের সকল সড়কের দু’পাশে আলোর ব্যবস্থা করায় এক সময়ের ভুতুড়ে এ জনপদ এখন রীতিমত আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে গড়ে ওঠা দুই শত বছরেরও বেশী বয়সী বট গাছ-এ নানা রং এর লম্বা ফিতা লাগিয়ে দিয়ে ঐতিহ্যের বাহক মন্দির প্রাঙ্গনের বট গাছের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
এদিকে পুর্বানুমতি ছাড়া মন্দির সংশ্লিষ্ট নন এমন কাউকে যেমন মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, তেমনী বহিরাগতদের মন্দির এলাকা পরিদর্শনের উপর কঠোর নজরদারি করছে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌছানোর সুযোগে প্রস্তুতির নানাদিক খতিয়ে দেখতে সোমবারের ন্যায় মঙ্গলবারও এসএসএফসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্তা ব্যক্তিরা মন্দির প্রাঙ্গনে সমন্বয় সভা করেছে। এ সভায় জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল ও জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পদস্থ কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জম্ম শত বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসার পরের দিন ২৭ মার্চ সকালে নরেন্দ্র মোদীর শ্যামনগরে আসার কথা রয়েছে। প্রায় ত্রিশ মিনিটের ঐ সফরে সনাতন ধর্মালম্বীদের গুরুত্বপুর্ন পীঠস্থান হিসেবে খ্যাত যশোরেশ্বরী কালি মন্দির ভারতের প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।