আল্লাহর সব সৃষ্টিই বিচিত্র। তবে এগুলোর মধ্যে জিরাফ প্রাণিটা খুবই বিচিত্র। ২১ জুন চলে গেল World Giraffe Day ২০২০। তাই এই উপলক্ষে জিরাফ নিয়ে কিছু মজার তথ্য;
– জিরাফ হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে লম্বা প্রাণি। এর এক-একটা পা-ই ৬ফুট লম্বা। আর গলাটাও প্রায় ৬ফুট লম্বা। তবে তার এই গলা লম্বা হওয়ায় গলার কশেরুকা (Cervical Vertebrae) যে বেশি তা কিন্তু না, অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের মত ৭টিই (c7)।
– দেখা যাচ্ছে এদের গলা অনেক লম্বা; Hangover part III দেখা থাকলে দেখা যায় Zach Galifianakis, গাড়িতে করে জিরাফ আনতে যেয়ে ফ্লাইওভারের সাথে বাড়ি লাগিয়ে জিরাফের মাথাই গুড়িয়ে দেয়। কিন্তু এত লম্বা গলা হওয়া সত্ত্বেও এ-ই গলা তার দেহের তুলনায় এত ছোট যে ঠিকমতো গলা নামিয়ে পানি খেতে পারেনা। ফলে সামনের দুইপা দুইদিকে ছড়িয়ে খুব কষ্ট করে পানি খেতে হয়। এত কষ্ট করে পানি খাওয়ার জন্যেই হোক বা আফ্রিকায় পানির স্বল্পতার কারণেই হোক, জিরাফ প্রতি ২-৩দিনে একবার পানি খায়। গাছের কচি পাতা থেকে এরা প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার গ্রহণ করে। একাশিয়া পাতা এদের খুব প্রিয় (২ ফুট লম্বা জিহ্বাটা দিয়ে টেনে টেনে দিনে ৪৫-৫০কেজিও খেয়ে ফেলে)।
– তবে এ-ই মাথা নিচু করে পানি খাওয়ার সময় যাতে মাথায় ব্লাড প্রেশার বেড়ে না যায়, সেইজন্য এদের ব্রেইনে একটি কমপ্লেক্স প্রেশার রেগুলেশন সিস্টেম (Rete Mirabile) আছে। এছাড়া এদের জুগুলার ভেইনে আলাদা ভাল্ভ আছে, ব্যাক ফ্লো আটকানোর জন্য। এছাড়াও এদের ইলাস্টিসিটি সম্পন্ন বিশেষ ব্লাড ভেসেল আছে, যেইগুলো প্রয়োজন অনুসারে সংকোচিত-প্রসারিত হয়ে ব্লাড ফ্লো ঠিক রাখে। জিরাফের এইসব সিস্টেমের উপর গবেষণা করেই নাসার বিজ্ঞানীরা স্পেস স্যুটের ডিজাইন নিয়ে চিন্তা করেছেন।
– এই এত উঁচু মাথায় রক্ত পৌছানোর জন্য এদের হার্টের সাইজটাও মাশাআল্লাহ, স্থলচর প্রাণিদের মধ্যে সর্ববৃহৎ, প্রায় ২ফুট লম্বা, যার ওজন প্রায় ১২কেজি। এদের নরমাল ব্লাড_প্রেশারও_সর্বোচ্চ, প্রায় ৩০০/১৮০ mmHg (যেখানে মানুষের নরমাল ১২০/৮০ mmHg)
– শুধু ঘোড়াই না, জিরাফও দাঁড়িয়েই ঘুমায়। তবে এদের ২৪ঘন্টায় মাত্র আধাঘন্টা ঘুমালেই চলে
– এরা বাচ্চাও দেয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই। ৬ফুট লম্বা ও প্রায় ৭০কেজি ওজনের সদ্যভূমিষ্ট বাচ্চাটা প্রায় ৬ফুট উপর থেকে মাটিতে পড়ে তবে এতে তার কিছুই হয়না, আধাঘন্টা-১ঘন্টা পরেই উঠে হাটা চলা করতে পারে।
– জিরাফের Penis প্রায় ৪০ইঞ্চি লম্বা। স্ত্রী জিরাফে গরুর মতই ৪টি স্তন, গরুর যেইখানে থাকে ঐখানেই থাকে; তবে বাচ্চা দিলেও তা অন্যান্য প্রাণির মত ফুলে উঠে না, ফলে স্বাভাবিকভাবে নজরে পড়েনা। মোটামুটি ১বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খায় বাচ্চা জিরাফ। তবে মিলনের পর থেকে পুরুষ জিরাফ বাচ্চার ব্যাপারে আর কোন দায় দায়িত্ব নেয়না, বাচ্চা মায়ের কাছেই বড় হয়।
– দুইজন মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মত, দুইটা জিরাফের চামড়ার প্যাটার্ন কখনো এক হবেনা।
– এরা হাঁটার সময় একবার বামপাশের দুই পা একসাথে, আবার ডানপাশের দুই পা একসাথে এগিয়ে হাঁটে। কিন্তু দৌড়ানোর সময় আগে পেছনের দুই পা, তারপর আবার সামনের দুইপা একটার পর একটা আগায়, মানে কখনো কোন দুইপায়ের খুর একসাথে মাটিতে ঠেকেনা।
– স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের মাথাতেই কার্টিলেজ দিয়ে তৈরি শিং-এর মত Ossicone থাকে। এইটা তারা হিটে আসা স্ত্রী জিরাফের সাথে মিলনে অগ্রাধিকার পাবার জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারির সময় কাজে লাগায়, সাথে গলা দিয়েও বাড়ি দেয়। তবে কোন শত্রু আসলে এদের স্যুপ বলের সমান খুর দিয়ে ভয়াবহ লাথি দেয়, যার একটাই ঠিকমতো লাগলে শত্রুর খুলি ফেটে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ।
পৃথিবীতে ৪ প্রজাতির জিরাফ আছে। আর প্রকৃতিতে একমাত্র আফ্রিকাতেই জিরাফ পাওয়া যায়। তাও একটি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকৃতিতে মাত্র ৬৮০০০ জিরাফ আছে। বনভূমি ধ্বংস, সেইসাথে এদের মাংস, চামড়া ও লেজের জন্য অধিক পরিমাণে জিরাফ শিকার করায় আজ এ-ই প্রাণিটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সবারই সচেতনতা জরুরি ।
লেখক:
ডাঃ সোহরাব আলী মোল্লা, টেকনিক্যাল সার্ভিস অফিসার। এসএমএস ফিড’স লিমিটেড, গাজীপুর।