নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নওগাঁর জেলার ভাষা সৈনিক ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জন কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জননেতা এমএ রকীব মারা গেছেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না-লিল্লাহি রাজেউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) মধ্যরাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন এ ভাষা সৈনিক।
এমএ রকীব ছিলেন ভাষা সংগ্রামী, ত্যাগ-সততা-আদর্শের রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, ব্যক্তিগত জীবনে মাওলান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদসহ দেশের অনেক গুণীজন নেতৃবৃন্দের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ সিপিবি ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক, কমিউনিস্ট পার্টির গোপন সদস্য, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, স্বাধীনতা উত্তর নওগাঁ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নওগাঁর ব্লাড ব্যাংক ডায়া। তার মৃত্যুতে সিপিবি নওগাঁ জেলা কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করছে।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এমএ রকীব এক সমভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার বাবা তাহের উদ্দিন পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯২৯ সালে ফরিদপুরে তার জন্ম। তিনি ১৯৪৭ সালে নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কলকাতা থেকে পিইউ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। কলকাতায় থাকা কালীন রংপুরের মনিকৃষ্ণ সেন তাদের বাড়িতে আসতেন। তিনি বাম চিন্তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ১৯৪৮ সালের দিকে রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবর রহমানের সান্তাহারের জনসভার পর মফিজ উদ্দিন উকিল সাহেবের বাড়িতে এক বৈঠকে আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠিত হয়। তিনি এর সাংগঠনিক কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
১৯৫৩ সালে নওগাঁতে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বার্ষিকী তাদের নেতৃত্বে পালিত হয়। ১৯৫৪ সালে ৯২(ক) ধারা জারি হলে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া হয় এবং তিনি আত্মগোপন করেন। তৎকালীন সরকার সম্পত্তি ক্রোক পরোয়ানা জারি করলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৫৮ সালে তাদের বাড়ি আবার সীল করা হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চলাকালে এমএ রকীব ছিলেন তৎকালীন রাজশাহী জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণার্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গে স্থাপিত ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের বালুরঘাট, বোয়ালদাড়, মালদা ও বহরমপুর ক্যাম্পের পরিচালক। বালুরঘাটে সিপিআই-এর সহযোগিতায় ক্যাম্প গড়ে তোলেন এবং প্রশিক্ষণ দেন। তিনি নওগাঁ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন এ গুণী ব্যক্তি ও ভাষা সৈনিক।