সাতক্ষীরার দেবহাটায় চররহিমপুর মসজিদের নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সদর ইউনিয়নের চর রহিমপুর গ্রামের মসজিদটিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দুই গ্রামের মুসল্লিদের পাশাপাশি স্থানীয় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগ বর্তমানে সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং বাকিরা বিভিন্ন গ্রাম্য ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন, চরশ্রীপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহিন কাদের বাপ্পী (৩০), চর রহিমপুরের শহিদুল সরদারের ছেলে শাহিন সরদার (৩৩), চরশ্রীপুরর মৃত ছফেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে আবুল হাসান (৪৫), ইমাদুল গাজীর ছেলে ইদ্রিস আলী (২৬), মৃত আকিল উদ্দীন গাজীর ছেলে মুনসুর আলী (৫৫), চর রহিমপুরের আব্দুস সবুর সরদারের ছেলে আতাউর (১৪), সাবুর আলী সরদারের ছেলে আশিকুর (৩৫), আব্দুস সবুরের স্ত্রী মহসিনা খাতুন (৩৭), শওকত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৮), মাজেদ সরদারের ছেলে শুকুর আলী (২৬), ছইল উদ্দীন সরদারের ছেলে হোসেন আলী (৩৫), শওকত আলীর ছেলে আহছান হাবীব (২৮), ওয়াহেদ আলী সরদারের ছেলে ফারুক হোসেন (৩৭)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, চর রহিমপুর গ্রামের ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি জামে মসজিদ রয়েছে তাদের। মসজিদটি পূর্ব থেকেই চররহিমপুর জামে মসজিদ নামে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মসজিদটিতে পাশ্ববর্তী গ্রাম চরশ্রীপুরের বাসিন্দারাও নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। ফলে দুই গ্রাম থেকে মসজিদটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে দুজনকে মনোনীত করেন মুসল্লীরা। মসজিদের বর্তমান সভাপতি রয়েছেন চরশ্রীপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আবুল হাসান গাইন এবং সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন চর রহিমপুর গ্রামের তোফাজ্জলের ছেলে রুহুল কুদ্দুস।
মসজিদটির নাম কেবলমাত্র চর রহিমপুরের নামে নামকরণ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চরশ্রীপুর গ্রামের মুসল্লিরাও তাদের গ্রামের নামটি মসজিদের নামে সম্পৃক্ত করার দাবী করে আসছিলেন। বিগত কয়েকমাস ধরে এ নিয়ে মসজিদের দুই গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মুলত মসজিদের বর্তমান সভাপতি আবুল হাসান গাইন চরশ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তার নেতৃত্বাধীন ওই গ্রামের মুসল্লীরা তাদের গ্রামের নামটি চররহিমপুরের আগে দেয়ার জন্য মসজিদ কমিটিকে তাগিদ দিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি মসজিদটির উন্নয়ন কাজ শুরু হলে দুই গ্রামের নাম মিলিয়ে ‘চররহিমপুর, চরশ্রীপুর জামে মসজিদ’ হিসেবে মসজিদের নামকরণ টাইলস খোচিত করা হয়। এতেই বাঁধে মুল গন্ডগোল। নামকরণ টাইলসে কেন আগে চরশ্রীপুর না লিখে চররহিমপুর লেখা হলো তা নিয়ে ক্ষুদ্ধ হন কমিটির সভাপতি আবুল হাসান গাইনের নেতৃত্বাধীন মুসল্লিরা। ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র রাতে মসজিদে লাগানো ওই নামফলকটির আংশিক ভেঙে ফেলা হলে বৃহষ্পতিবার মসজিদটির জমিদাতা হিসেবে চররহিমপুর গ্রামের মৃত সহিদুল ইসলামের ছেলে ইউনুছ আলী বাদী হয়ে মসজিদের সভাপতি আবুল হাসানসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে আরোও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সভাপতি আবুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চরশ্রীপুরের মুসল্লি ও চর রহিমপুর গ্রামের মুসল্লিদের মধ্যে। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে মারপিট পাল্টা মারপিটে দুই উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ২০ জন গুরুতর আহত হন।
দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নিয়েছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।