রাজশাহী জেলা পরিষদের অধীনে গোদাগাড়ী উপজেলায় চারটি ফেরিঘাট ইজারার মধ্যে দুইটি ফেরিঘাট নামমাত্র মূল্যে এক মাসের জন্য ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসান ও পরিষদের সার্ভেয়ার আলিফের কারসাজির মাধ্যমে গোদাগাড়ীর ফুলতলা ভাটোপাড়া ও বড়গাছি-পেটাও-বিদিরপুর ফেরিঘাট দুইটি পছন্দের ইজারাদারদের এক মাসের জন্য নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, বড়গাছি-পেটাও-বিদিরপুর ফেরিঘাটটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় লিমন নামের এক ইজারাদারকে এবং ফুলতলা ভাটোপাড়া ফেরিঘাটটি ৫৫ হাজার টাকায় আইনুল নামের এক ইজারাদারকে এক মাসের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাজশাহী জেলা পরিষদ চারটি ফেরিঘাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল, ১৪৩২ সনের ১লা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত এক বছরের জন্য ফেরিঘাটগুলো ইজারা দেওয়া হবে।
ঘাটগুলোর সরকারি ইজারা মূল্য ছিল:
• বড়গাছি-পেটাও-বিদিরপুর: ৮২,৬১,০০০ টাকা
• ফুলতলা ভাটোপাড়া: ৬৬,১১,০০০ টাকা
• প্রেমতলী: ৫,৮৩,০০০ টাকা
• গাবতলী (পবা উপজেলা): ১১,৮৮,৭৮৩ টাকা।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও সিডিউল ক্রয়ের তেমন সাড়া না পেয়ে জেলা পরিষদ ঘাটগুলো মাসিক খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোনো ধরনের নোটিশ বা পূর্ব ইজারাদারদের অবহিত না করেই ফুলতলা ভাটোপাড়া ও বড়গাছি-পেটাও-বিদিরপুর ঘাট দুইটি এক মাসের জন্য নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়।
এছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে, আন্তঃজেলা ফেরিঘাট যেমন ভগবন্তপুর এক মাসের জন্য ৬ লাখ টাকায় এবং সুলতানগঞ্জ ঘাট ২৬ লাখ টাকার ডাকের পরিবর্তে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়।
একজন ইজারাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ফুলতলা ভাটোপাড়া ঘাট প্রতিবছর প্রায় ৬৫ লাখ ও বিদিরপুর ঘাট ৭৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ এই দুইটি ঘাট মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যেমন বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি সরকার রাজস্ব হারিয়েছে লক্ষাধিক টাকা।”
এ বিষয়ে সার্ভেয়ার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (অ:দা:) আলেফ আলী জানান, “ঘাটগুলোর ইজারা ওপেন ডাকের মাধ্যমে হয়েছে, যেখানে সবাই অংশ নিতে পারে। পুরাতন ইজারাদারসহ প্রায় ৫০ জন ইজারাদার ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে ডাক হয়েছে। আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন।” তবে, কম মূল্যে ঘাট ইজারা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ঘাটের ফাইল দেখি না, এটি দেখেন প্রধান সহকারী আব্দুল মতিন। আমি নিজেও মনে করি, এই ঘাটগুলোর প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি হওয়া উচিত। বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার।”
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।