সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সুনাম দেশজুড়ে। এখন জেলার বেশ কিছু বাগানের আম বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে দেশের অন্য সব জেলার আম পাকার আগেই সাতক্ষীরার আম পাকতে শুরু করে। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে বিক্রি শুরু হয় এই আম।
গতবছর আম পাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার প্রায় সব আমবাগান। আম ও বাগান নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমচাষিরা। চলতি মৌসুমে তীব্র দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার সাতক্ষীরার আম আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। তবে এবছর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় গাছের ফল গাছে রয়েছে, এতেই খুশি চাষিরা।
এবারও প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের আগে কোনো চাষি আম পেড়ে বাজারজাত করতে পারবেন না। কিছু এলাকায় গোবিন্দভোগ আম পাড়ার অনুমতি মিললেও হিমসাগর, ল্যাংড়া আম এখন গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারজাত করার অপেক্ষায় চাষিরা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অনাবৃষ্টি, খরা, কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এ বছর আম সংগ্রহের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়সূচি অনুযায়ী পহেলা মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ আগামজাতের আম বাজারজাত করা যাবে। এছড়া ২১ মে থেকে হিমসাগর আম, ২৭ মে থেকে ল্যাংড়া আম ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারজাত করা যাবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য, জেলার সাত উপজেলায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে পাঁচ হাজার আমবাগান আছে। জেলায় তালিকাভুক্ত আমচাষি ১৪ হাজার। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন।
পুরাতন সাতক্ষীরার এলাকার আমচাষি আব্দুল গফফার বলেন, ‘এবছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আম ঝরে গেছে, আম সাইজে কিছুটা ছোট হয়েছে। তারপরও ফলন বেশ ভালো। আশা করছি, ঝড় না হলে এবার ভালো দামে আম বিক্রি করতে পারব। এখন আমরা আম পাড়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
একই এলাকার আমচাষি আব্দুর রহিম বলেন, ‘গতবছর ঝড়ে বাগানের সব আম ঝরে যায়। অনেকগুলো গাছ ভেঙে যায়। এবছর এখনো ঝড়বৃষ্টি হয়নি। কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের ১৭ তারিখের পর আম পাড়তে বলা হয়েছে। আমি এখন সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। এরমধ্যে যদি কোনো দুর্যোগ না হয় তাহলে এবার আম বিক্রি করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।’
জেলার আমচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও ক্ষিরসরাইসহ বিভিন্ন জাতের আম বিদেশে রফতানি হয়। গতবছর করোনার কারণে বিদেশে আম পাঠানো যায়নি। এরপর বাজারে আম ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সব আম নষ্ট হয়ে যায়। আমরা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। সে সময় জেলা প্রশাসক ও জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বাগান পরিদর্শনে এসে সব দেখে যান। সে সময় চাষিদের সহযোগিতার কথা বলা হলেও আমরা কোনো অনুদান বা প্রণোদনা পাইনি।’
তিনি বলেন, এ বছর আবারো কয়েকটি কোম্পানি বিদেশে আম রফতানির জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের মান অনুযায়ী আম সরবারহ করতে পারব। বেশ কয়েকটি বাগানে তাদের নিয়ম অনুযায়ী আমের পরিচর্যা করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারেও সাতক্ষীরার আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের আগে কোনো চাষি আম বাজারজাত করবেন না।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে গতবছর বিদেশে আম রফতানি হয়নি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলার প্রায় সব চাষির আম ও আমের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এবার ১৪টি কোম্পানি বিদেশে আম রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সুপারশপগুলোতে পৌঁছে যাবে সাতক্ষীরার আম। ইতোমধ্যে কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলা কৃষি বিভাগের বৈঠক হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ৫০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে।’
এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তীব্র দাবদাহ ও বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু আম গাছ থেকে ঝরে গেছে। এ বিষয়ে আমরা কৃষকদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছি।