রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের ধরতে রোববার ভোর থেকে দিনভর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন। রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চর এলাকায় পরিচালিত এ অভিযানে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাকনের নেতৃত্বাধীন ‘কাকন বাহিনী’র সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পর কাকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাকনসহ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে তাদের দমনে রোববার ভোরে যৌথভাবে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ নামে অভিযান শুরু করে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমসহ প্রায় এক হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন। এ ছাড়া র্যাব ও এপিবিএনের সদস্যরাও অভিযানে যোগ দেন।
পুলিশ জানায়, পদ্মার চর এলাকায় কাকন বাহিনী ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মন্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে খুন, চরের চাষী–জেলে হত্যা, জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র পাচার, অবৈধ অস্ত্র দখলে রাখা, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন–সর্বহারাদের আশ্রয় দেওয়া, পদ্মা চরের খড়ের মাঠ দখল ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাদের তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরেই অশান্ত থাকে চরাঞ্চল।
রোববার বিকেলে রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযানে রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চল থেকে মোট ৫৮ জন এবং খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল থেকে আরও ৯ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলেও জানান তিনি।
অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, দুটি গুলির খোসা, ২৪টি হাসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছোরা, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, একটি লোহার পাইপ, পাঁচটি মোটরসাইকেল, ২০ বোতল ফেনসিডিল, ৮০০ গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চর থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, একটি স্পিডবোট, অস্ত্র রাখার সিলিন্ডার, দুটি তাবু ও পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, এই অভিযানই শেষ নয়, বরং এ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের সূচনা হলো। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে। সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।