দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতার সফরে গিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা নেটওয়ার্ক।
তুরস্কের বার্তাসংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার জোট সুপ্রিম স্ট্র্যাটেজিক কমিটির ৭ম বৈঠকে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে কাতারে গিয়েছেন এরদোয়ান। কাতারে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা গোকসু আল জাজিরাকে জানান, বৈঠকে সংস্কৃতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ত্রাণ, খেলা-ধুলা, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, ধর্মীয় বিষয়সহ বহুমুখী ইস্যুতে আলোচনা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মধ্যে।
গোকসু আরও জানান, সুপ্রিম স্ট্র্যাটেজিক কমিটির প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৫ সালে। তার পর থেকে পারস্পরিক সহায়তাভিত্তিক বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশের সরকার। তবে কমিটি গঠনের পর, গত ছয় বছরে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয়েছে গত বছর ২০২০ সালে ও চলতি বছর ২০২১ সালে।
মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলে তুরস্কের একটিই সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, আর সেটি কাতারে। কয়েক হাজার তুর্কি সেনা রয়েছেন সেই ঘাঁটিতে।
কাতারের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে তুরস্কে একটি অস্থায়ী বিমানঘাঁটি করতে চায় কাতারের সরকার। আপাতত সেই ঘাঁটিতে ৩৬টি যুদ্ধবিমান রাখা হবে। স্ট্র্যাটেজিক কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কাতারের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা।
এদিকে, সম্প্রতি বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় তুরস্কে তীব্র আকার নিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দাম কমছেই। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে তুরস্ককে ইতোমধ্যে ১৫০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে কাতার।
কাতার ও তুরস্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঘনিষ্ট হওয়া শুরু ২০১৭ সালে- যখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর দেশটির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলন আরব বসন্ত বা আরব স্প্রিংয়ে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ছিল কাতারের বিরুদ্ধে।
সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞায় স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে কাতার। খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্থল ও জলসীমান্ত দিয়ে আমদানি কার্যত প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। সেসময় যে দেশগুলো কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেসবের মধ্যে তুরস্ক ছিল প্রথম সারিতে। এই দেশটিই প্রথম কাতারের সঙ্গে সে সময় বিমানপথে বাণিজ্য শুরু করে। কাতারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রাথমিক যোগান সেসময় দিয়েছিল তুরস্ক।