ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিদগ্ধরা পোড়া শরীর নিয়ে বরিশাল শেরে বাংলা হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেই সময় সাথে থাকা স্বজনদের চারিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বেডের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মানুষদের কাছে জানতে চচ্ছেন হারিয়ে ফেলা স্বজনদের খোঁজ। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮১ জন অগ্নিদগ্ধ মানুষ।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঝালকাঠিতে লঞ্চের আগুনে দগ্ধ মো. কালু। পোড়া শরীরের যন্ত্রণা, সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৯ সদস্যের খোঁজ না পাওয়ায় অঝোড়ে কাঁদছেন তিনি। কালু জানান, ঢাকায় তিনি রুটির দোকানে কাজ করেন। বাড়ি বরগুনাতে। তিনি বলেন, আমার বড় বোনের স্বামী কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে বরগুনা এসেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে আমার স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাগ্নে, ছোট বোনসহ মোট ১০ জন ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম আগুন লেগেছে। এরপর ছোটাছুটি শুরু হলো। আগে বুঝতে পারলে সবাইকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতাম। আমি এখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি। কাউকে খবরও দিতে পারছি না। কারও খোঁজও পাচ্ছি না।
শেরে বাংলা হাসপাতালে স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজছেন ঢাকার বায়িং হাউজ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, ছুটিতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি বরগুনায় বেড়াতে যাচ্ছিলাম। মেঝো মেয়ে লামিয়া অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে নুসরাত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে ইমু ছিলো ঢাকায়। ইসমাইল বলেন, আগুন লাগার পর ঘুম ভেঙে দেখি সবাই ছুটোছুটি করছে। খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ সঙ্গে আমার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও বাচ্চারা আছে। লাইফ জ্যাকেটের সন্ধানে তখন নিচে ছুটে যাই। কিছুক্ষণ পর ফিরে মা ছাড়া আর কাউকে পাইনি। উদ্ধারকারী ট্রলারে মাকে নিরাপদে নিয়ে আসি। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে খোঁজ নেই। দেখি সেখানে ভর্তি আমার মেঝো মেয়ে লামিয়া। তার মুখ ঝলছে গেছে। ছোট মেয়ে আর স্ত্রীর খোঁজ এখনও পাইনি । ইসমাইলের বড় মেয়ে তানজিলা ইমু জানান, রাত সাড়ে এগারটার দিকে বাবা মা ও বোনদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। রাত ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে বাবা ফোন করে বলে ‘লঞ্চে আগুন লেগেছে, মা দোয়া করিস’... বলে লাইন কেটে দেন। এরপর অনেক চেষ্টায় ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে বাবার ফোনে কল করলেও, চিৎকার ছাড়া কিছু শুনিনি। বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, এ লঞ্চের বেশিরভাগ যাত্রীই বরগুনার। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়ি যাচ্ছিলেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু লঞ্চটি বরগুনায় আসছিল, যাত্রীদের অনেকেই বরগুনার। জেলা প্রশাসনের টিম নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৩ টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। আগুনের ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়েছে।