আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এটি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম নির্বাচন। ১৯৯০ সালের পর দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। সাড়ে তিন দশক পর রাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিলো। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এখন ফলাফলের অপেক্ষা শিক্ষার্থীসহ দেশ। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭ কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলে। ক্যাম্পাস ও আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবস্থান ছিলো চোখে পড়ার মতো। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক নজরদারির মধ্যেও প্রতিটি প্যানেল থেকে পাঁচজন করে বহিরাগতকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগে ক্যাম্পাসে দেখা গেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। শিক্ষক কর্মচারী কর্মকর্তাসহ সকলে ধৈর্য্যশীলের পরিচয় দিলে আমরা কোনো প্রকাশ অঘটন ছাড়াই সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। ফলাফলের জন্য ধৈর্য্যশীলের পরিচয় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
রাকসু নির্বাচনের দিন (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেট এলাকায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানুল্লাহ আমানকে বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় উপস্থিত অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমি নিজেও দেখেছি বিষয়টি। প্রশাসনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও একটি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা কীভাবে ভোট চলাকালে ক্যাম্পাসে ঢুকল।
তিনি বলেন, এরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঢুকেছেন। এ ধরনের ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংগঠন আবেদন করেছিল। সেই আবেদন বিবেচনা করে প্রতিটি প্যানেলকে পাঁচজন বহিরাগত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বহিরাগত ও নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, বহিরাগতরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। শুধু ক্যাম্পাসে ঘুরে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। ছাত্রদল, শিবিরসহ যারা আবেদন করেছে, সবাইকেই সমানভাবে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো বৈষম্য করা হয়নি। যেহেতু ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে সেহেতু এখন সবাইকে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ভোট গণনা শেষে আমরা ফলাফল জানিয়ে দিবো।
কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হলেও অমোচনীয় কালি নিয়ে কথা বলেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নুরু উদ্দিন আবির। তিনি বলেন, ‘অমোচনীয় কালি দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভোট দেয়ার পর তা উঠে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এই জায়গায় তাদের কথা রাখতে পারেনি। তবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে।
রাকসু নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। রাকসু নির্বাচনে বোমা ফাটানো ও অস্ত্র বিতরণের ভিডিও ফুটেজ এ আই দিয়ে করা বলে দাবি করেন আরএমপি পুলিশ। দুটি ঘটনার পরপরই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন।
আরএমপি পুলিশ জানায়, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নিকট বোমা ফাটানো ভিডিও দৃষ্টিগোচর হলে, পরবর্তীতে ভিডিওটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফ্যাক্ট-চেক করে দেখা যায়, দৃশ্যটি সম্পূর্ণরূপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা তৈরি যা ভুয়া। কোনো একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের ভুয়া ভিডিও প্রচার করছে।