রাজশাহীতে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উদ্যোগে বিভাগীয় সমাবেশ উৎসবমুখর পরিবেশে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় নগরীর এস.কে ফুড কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এই সমাবেশে রাজশাহীর ৮ জেলা, মহানগর এবং বিভিন্ন উপজেলার কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা এই সমাবেশে সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, অধিকার, স্বাধীনতা, আধুনিক সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
সমাবেশ শেষে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা ও বিশেষ অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। ৩৬ জুলাই আহত মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সানোয়ার আরিফ, কালের কণ্ঠের আহত সাংবাদিক নাঈম হোসেন এবং সংবাদ চলমানের সাংবাদিক মতিউর রহমানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি রাজশাহীর ৮ জেলা, মহানগর এবং সকল উপজেলা কমিটির সদস্যদেরও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। সম্মাননা প্রদান করা হয় রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. নুরে ইসলাম মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজম অপুকেও। বিভাগীয় দপ্তর সম্পাদক মো. সুরুজ আলী সম্মেলন সফল করার বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হন। প্রধান অতিথি জাতীয় সংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর গনি সবার হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. নুরে ইসলাম মিলন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজম অপু। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীতি নির্ধারণ পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ মনজুর হোসেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি মো. আবুল বাশার মজুমদার।
প্রধান অতিথি মো. আলমগীর গনি তার বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকরা সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো মানুষ। অথচ তাদের ওপর অব্যাহত হামলা, মামলা, হুমকি ও হয়রানি গণতন্ত্রের জন্য গভীর হুমকি। তিনি বলেন, “সত্য বলা কখনোই অপরাধ হতে পারে না, বরং সেই সত্য রক্ষা করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।” তিনি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় জাতীয়ভাবে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধান বক্তা মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, সাংবাদিকরা জাতির পথ দেখান, তারা অন্ধকারের মধ্যেও আলো জ্বালান। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হলে দেশ পিছিয়ে পড়ে। সাংবাদিকদের ঐক্যই গণতন্ত্রের শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে।” তিনি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার ভূমিকাকে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথি মো. আবুল বাশার মজুমদার বলেন, পেশাদার সাংবাদিকতার উন্নতি নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি, আইনি জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুন রশিদ মামুন তার বক্তব্যে বলেন, সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের যেভাবে হয়রানি, হামলা ও মামলার মুখে পড়তে হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। তিনি বলেন, “যারা সত্য বলেন, তাদের রুখে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষা জরুরি।”
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল হুদা বলেন, দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে এসেছে, যা সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনকে কঠিন করে তুলেছে। তিনি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার ভূমিকাকে সাহসী ও দায়িত্বশীল উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সমাবেশে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা কারও বিরোধী নয়; তারা সত্যের পক্ষে কাজ করে। তিনি বলেন, “সত্য বলার পথ কখনো সহজ ছিল না, কিন্তু এই পথেই আলো রয়েছে।”
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
রাজশাহীর আলো পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক আজিবার রহমান বলেন, সাংবাদিকরা দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করেন, তাই তাদের দেওয়ার আছে অনেক, নেওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, “সত্যের পক্ষে কলম চালানো সাংবাদিকরাই জাতির প্রকৃত আলোকবর্তিকা।”
রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি দেশের উন্নয়ন ও সমাজ পরিবর্তনের অস্ত্র। তিনি বলেন, “ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজই ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. নুরে ইসলাম মিলন তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সর্বদা কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম থেমে থাকার নয়। আমাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি, আর সেই শক্তিতে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সোচ্চার থাকব।” তিনি সমাবেশে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং এই ঐক্য আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সবশেষে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলতাফ হোসেনের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।