দেশের উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সবার আগে বন্যা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে মেয়াদী বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানায় বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়া অফিস বলছে, দেশে আরও দুই মাস বর্ষা মৌসুম আছে। মূলত আসাম-মেঘালয়-নেপালের দিকে বৃষ্টি বাড়লে উজানের ঢলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা দেখা দেয় ভাটির এই দেশে। সম্প্রতি ওই দিকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে আগামী সপ্তাহ জুড়ে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি নদীগুলোতে পানি বাড়বে। বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। বাড়বে বৃষ্টির আয়তনও। যে সব জায়গায় বৃষ্টি কম হচ্ছে সে সব জায়গাতেও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি মৌসুমি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। যার একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৬০০ কে ১ হাজার মিলিমিটার বা তার চেয়েও বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে চলতি সপ্তাহে। তুমুল বৃষ্টি হবে ভুটানেও। ভারত ও ভুটানের এই বৃষ্টির পানি বাংলাদেশে ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হবে।
বন্যা ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টির পেছনে উজানের পানি ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা পানি ভারত ও নেপাল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে আগে বন্যা দেখা দিতে পারে। তারপর জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকায় দেখা দেবে বন্যা। পানি বেশি হলে ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বন্যার পানি।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে সারা দেশের দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য রোববার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখলী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ সিলেট অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭৬, পটুয়াখালী ৭৪, চুয়াডাঙ্গা ৬৯, সন্দ্বীপে ৬৮ ও মাইজদীকোর্টে ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বাড়তি অংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।