বাংলাদেশের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দীর্ঘদিনের পদোন্নতি বৈষম্য ও প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণের দাবিতে সারাদেশের মতো লালমনিরহাটেও কঠোর কর্মসূচি পালন করেছেন প্রভাষকরা। “No Promotion, No Work”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট সরকারি কলেজ চত্বরে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জেলা ইউনিটের সদস্যরা। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিভাগের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপকসহ জেলার শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
প্রভাষক পরিষদের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ—৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএস ব্যাচের ২,৩৯৯ জন কর্মকর্তা দীর্ঘ ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য সকল ক্যাডার নিয়মিত পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ক্যাডারে এখনও স্থবিরতা, বৈষম্য ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অব্যাহত রয়েছে।
“১১ বছরের বঞ্চনা—এটা আর মেনে নেওয়া যায় না”: জেলা ইউনিটের সভাপতির ক্ষোভ,
প্রভাষক পরিষদ লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আবু সাদেক মো. জুন্নুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“অন্যান্য সকল ক্যাডার ৩৭তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ক্যাডারের ৩২ থেকে ৩৭ ব্যাচের ২,৩৯৯ জন কর্মকর্তা দীর্ঘ এক যুগ পদোন্নতি বঞ্চিত। এটি শুধু অন্যায় নয়—এটি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য। দ্রুত সব জটিলতা সমাধান করে মন্ত্রণালয়কে প্রভাষকদের পদোন্নতির জিও জারি করতে হবে। একই সঙ্গে ২০০০ বিধি ভঙ্গ করে আত্মীকৃত শিক্ষকদের পক্ষে করা অবৈধ ৫৭টি আদেশ বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ক্যাডার হলো জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত্তি; অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা যাচ্ছে।
ভূতাপেক্ষিক পদোন্নতির দাবি—“এটাই শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে” ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরমান রহমান বলেন,
পদোন্নতি বঞ্চনায় পিষ্ট বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের ভূতাপেক্ষিক (time-scale based) পদোন্নতি বাস্তবায়ন ছাড়া সমাধান নেই। এতে শিক্ষাঙ্গনে যেমন শৃঙ্খলা ফিরবে, তেমনি শিক্ষকরা কাজে নতুন উদ্যম ফিরে পাবেন।”
তার মতে, প্রশাসনিক গতি স্থবির হয়ে পড়ায় শিক্ষকরা যেমন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও সরাসরি এর প্রভাব অনুভব করছেন।
“বারবার রাস্তায় দাঁড়ানো-এটাই রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রমাণ” উম্মে তাজ এ জান্নাত
১১ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উম্মে তাজ এ জান্নাত বলেন
“গত পাঁচ বছর ধরে কয়েক দফা আন্দোলন করেছি। প্রতিবারই ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। যে অধিকার প্রাপ্য, সেটার জন্য যদি ঘন ঘন রাস্তায় নামতে হয়—তাহলে রাষ্ট্র তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। শিক্ষককে বারবার আন্দোলনে যেতে হলে শিক্ষার মান কীভাবে রক্ষা পাবে?”
তিনি বলেন, অবহেলার শিকার হওয়ার পরও শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপসহীন চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কলেজ অধ্যক্ষের সরব সংহতি লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু ইমাম মো. রাশেদুন্নবী এ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা দেশের মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকরা সেই মেরুদণ্ডের কারিগর। তাদের ন্যায্য দাবি ও পদোন্নতির অধিকার উপেক্ষা করলে শিক্ষা ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হবে—যার দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
পদোন্নতি স্থবিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রভাষকদের অভিযোগ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়ায় কর্মস্পৃহা কমে যাচ্ছে সু
প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠছে না শিক্ষকরা আর্থিক ও পেশাগতভাবে পিছিয়ে পড়ছেন মেধাবীদের শিক্ষা ক্যাডারে আসার আগ্রহ কমে যাচ্ছে
এ কারণে পুরো উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাই ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রভাষক পরিষদের দাবি ১. ৩২তম–৩৭তম বিসিএস ব্যাচের ২,৩৯৯ জন কর্মকর্তার দ্রুত পদোন্নতি ২. ২০০০ বিধি লঙ্ঘন করে দেওয়া অবৈধ ৫৭টি আত্মীকরণ আদেশ বাতিল ৩. সকল ব্যাচে সমানুপাতে নিয়মিত পদোন্নতি কাঠামো বাস্তবায়ন ৪. ভূতাপেক্ষিক (time-scale) পদোন্নতি পুনর্বহাল
শেষ কথা শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের অভিযোগ এবং দীর্ঘদিনের বৈষম্য এখন জাতীয় সমস্যার রূপ নিয়েছে। লালমনিরহাটের আন্দোলন শুধু জেলা নয় সারাদেশে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভ, হতাশা ও বঞ্চনার প্রতিচ্ছবি। সমাধান এখন সময়ের দাবি।