ব্রিজ, কালর্ভাটের মুখ বন্ধসহ ঘেরের অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধের কারণে যশোরের কেশবপুরে ১০ গ্রামের হাজারও পরিবার সারা বছরই পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানিবন্দী এলাকার মানুষেরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত্ম হয়ে পড়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠার কারণে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাকো। জলাবদ্ধতার কারণে ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো।
ভবদহ প্রকল্পের আওতায় পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের কালিচরণপুর, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, বেতিখোলা, মাদারডাঙ্গা, নারায়নপুর, পাথরঘাটা, আড়ুয়া, ময়নাপুর, সানতলা ও গৃধরনগরসহ আশপাশের ১০/১২ গ্রামের হাজারও জনগণ বিগত ৭/৮ বছর ধরে পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। এরমধ্যে বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের মানুষ সম্পূর্ণ পানিবন্দী। অতীতে এসব এলাকার মানুষ জমিতে চাষাবাদ ও খালবিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০০০ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালীরা বিলগুলি দখল করে মাছের ঘের করেন। এসময় ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে ফেলে। এরপরও ঘের মালিকরা মাছ চাষের জন্যে শুষ্ক মওসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করে। ফলে বর্ষাকালে যেনতেন বৃষ্টিতেই পানি মানুষের বসত বাড়িতে উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। প্রায় সারা বছরই মানুষের বসতভিটায় পানি থাকায় এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়েছে। তাই পানিবন্দী জনগণ পানির হাত থেকে রÿায় প্রতিটি বাড়িতে ডিঙি নৌকা ও বাঁশের সাকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে। খাদ্যাবাভাব দেখা দিয়েছে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে। বাগডাঙ্গা গ্রামের অনাথ বন্ধু সরকার, মিহির সরকার জানান, গত আশ্বিন মাস থেকে তাদের গ্রামের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে জল। আজও জল নামেনি। এরপরও মনিরামপুর এলাকার ঘের মালিকদের পাশাপাশি পাঁজিয়া ও সুফলাকাটি ইউনিয়নের ঘের মালিকরা দিন রাত স্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চালানোর ফলে দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বসতভিটার পানির কারণে নারায়নপুর গ্রামের ইজ্জেত আলী মোড়লসহ অনেক পরিবার বাড়ির মায়া ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন। এলাকার নারী-পুরম্নষরা সারাদিন পানিতে চলাচলের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, চুলকানিসহ নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত্ম হয়ে পড়েছে। ৫/৬ বছর ধরে কোন ফসল আবাদ হচ্ছে না। বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে পানি নিষ্কাশনে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও কার্যত কোন সুফল আসেনি। ২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি চলছে। শ্রী নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন করতে গিয়ে ঘের মালিক আকবার আলীর নারায়নপুর বিলের ঘেরের বেঁড়ি ভেঙে নতুন করে পানি মানুষের বসতভিটায় উঠেগেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋুতুরাজ সরকার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চলতি বোরো মওসুমে ভবদহ সংলগ্ন ১৬ বিলের সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সি আছাদুলস্নাহ বলেন, ভবদহ সংলগ্ন ২৭ বিলের পানি কাটাখালির স্স্নুইস গেট হয়ে ডায়ের খালের ৮ ব্যান্ড স্স্নুইস গেট দিয়ে শ্রী নদীতে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু শ্রী নদী পালিতে ভরাট হওয়ার কারণে পানি সরছে না। ভবদহ প্রকল্পে শ্রী নদী অন্ত্মর্ভূক্ত আছে। ভবদহ প্রকল্প অনুমোদন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।