কেশবপুরে পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে সাজানোর ইচ্ছা থেকে আজ সমাজের পিছেয়ে পড়া নারীদের সাজিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা শাহানাজ পারভীন।
নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অন্য গ্রামের নারীদেরও স্বাবলম্বী করে তুলছেন। তার তৈরি পুঁতির পণ্য এখন যাচ্ছে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।শাহানাজ পারভীন ছোটবেলায় শখ থেকেই শুরু করে ছিলেন হাতে তৈরি পুঁথির নিপুণ কারুকাজ। এখনো আগের মতোই সেই কাজ নিরন্তর করে চলেছেন। নিজের চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, পুঁজি ও ঋণ করা স্বল্প সম্পদ কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে তিনি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। পরিণত হয়েছেন উদ্যোক্তায়।শাহনাজ পারভীন কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল ২৩ মাইল গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কেশবপুর উপজেলা শাখার প্রশিক্ষক কল্পনা রানীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন শাহানাজ পারভীন।প্রথমে পুঁতি দিয়ে নৌকা ও তাজমহল তৈরির মধ্য দিয়ে তার হাতের কাজের শুরু। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০১৯ সালে উপজেলা পর্যায়ে হস্তশিল্প মেলায় অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেন। গত ৫ বছর ধরে নিজ গ্রাম আলতাপোল ও উপজেলা শহরে স্থায়ীভাবে অনেক নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তার মাধ্যমে অনেক নারী এখন ঘরে বসেই কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।শাহানাজ পারভীনের নিজের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের ২০ নারী পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন।সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে একজন নারী পুঁথির তৈরি তাজমহল,নৌকা,টিস্যু বক্স, জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার, ঝাড়বাতি,বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ,কলমদানি, ফল-ফুল,মাছ, পশু-পাখি ইত্যাদি তৈরি করে দুইশ থেকে তিনশ টাকায় আয় করেন। আবার অনেক দক্ষ শ্রমিক দিনে চারশ বা তারও বেশি টাকা আয় করতে পারেন। নিয়মিত কাজ করায় তাদের হাতের ছোঁয়ায় পুঁতির তৈরি পণ্য আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে উঠছে। শাহানাজ পারভীন তাদের পণ্য বাজারজাত করার কাজটিও দক্ষতার সঙ্গে করছেন।শাহানাজ জানান, ২০১৬ সালে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামী কামরুল ইসলামের হার্টে রিং বসানো হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার সত্তে¡ও কেশবপুর উপজেলায় সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হন। হাতে-কলমে পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ শেখেন। তিনি আরও জানান, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান তার হাতের তৈরি পণ্য দেখে প্রচুর অর্ডার দেয়। প্রতি মাসে হস্তশিল্পজাত সামগ্রী বিক্রির করে আট থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। এতে উৎসাহ বেড়ে যায়। শাহানাজ পারভীনের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফুলমতি বলেন, প্রতিদিন পুঁতির তৈরি হস্তশিল্পে কাজ করে দুই-তিনশ টাকা উপার্জন করি। আরেক নারী আছিয়া বেগম বলেন, এখানে আধাবেলা কাজ করে যে টাকা পাই তাতে ছেলেমেয়ের পড়ালেখাসহ সংসার ভালোভাবে চলে যায়। স্থানীয় ইউপি মেম্বার কেএম রেজওয়ানুর রহমান টিপু বলেন, প্রবল ইচ্ছাশক্তি রয়েছে শাহানাজ পারভীনের। তিনি আমাদের এলাকার গর্ভ। উদ্যোক্তা শাহানাজ পারভীন বলেন, নিজ মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় চালিত যে কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে যেমন সম্মানজনকভাবে জীবিকা উপার্জন করা যায়, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখা যায়। আমি তাই করছি। তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামের শত শত নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা সম্ভব।কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, আমি শুনেছি আলতাপোল ২৩ মাইল গ্রামের একজন নারী (শাহানাজ পারভীন) পুঁতির পণ্য তৈরি করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি আরও বলেন, যারা স্বাধীনভাবে নিজস্ব মেধা, দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কিছু করতে চায়, তারাই আত্মকর্মসংস্থানে এগিয়ে আসেন। শাহানাজের মতো নারীদের পাশে সবার থাকা উচিত।