রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
সর্বশেষ সংবাদঃ
রাজশাহীর জন নিরাপত্তা বিঘ্নকারী ট্রাইব্যুনাল ও দায়রা জজ -২ আদালতে দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মোহনপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ক ক টে ল ও দেশীয় অ স্ত্র সহ আটক ৫ রাজশাহী কোর্ট চত্বরে গণঅধিকার পরিষদের প্রাঙ্গণে লিফলেট বিতরণ মাদক মামলায় ০৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ০১ জন আসামী গ্রেফতার মোহনপুরে হিমাগারে বাঁশের বেড়া অপসারণ করলেন প্রশাসন  রাজশাহীতে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই দুর্গাপুরে ডিপ টিউবওয়েল নিয়ে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত আহত ১০ , খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাব ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে সাধারণ সম্পাদক একাদশ বিজয়ী রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানা হতে অবৈধ মাদকদ্রব্য ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ মাদক ব্যবসায়ী ফারুক‘কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫ বাগমারায় টেলিগ্রাম অ্যাপসে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার  ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা রাবি শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল মানববন্ধনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার: আইনজীবীর লিগাল নোটিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবীতে ট্রেন অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন হোস্টেলের ভাড়া কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে ১২ মামলার মূল হোতা সাব্বির‘কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫ শিবগঞ্জে ২ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার এক রাজশাহীর তানোরে গলায় ফাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা রাজশাহী জেলা গণধিকার পরিষদের নতুন কমিটি অনুমোদন রাজশাহীর দূর্গাপুরে হত্যা মামলার ৫ জন এজাহার নামীয় পলাতক আসামীদেরকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার জয়পুরহাটের ছোট হেলকুন্ডা এলাকায় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার মুল আসামী আমানত’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫
Notice :
প্রিয় পাঠক   দৈনিক মাগুরার কথা   অনলাইন নিউজ পোর্টালে আপনাকে স্বাগতম । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম মেনে বস্তু নিষ্ঠ তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রচার করতে আমরা বদ্ধ পরিকর ।  বি:দ্র : এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা,  ছবি ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি । এখানে ক্লিক করুণ Apps  

রাজশাহী পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৫৮ বার পঠিত হয়েছে।
নিউজ প্রকাশ : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:৫৩ অপরাহ্ন

রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক এমপিওভুক্তির আড়ালে গড়ে উঠেছে ভয়াবহ এক জালিয়াতি চক্র। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের নাম, ছবি ও স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করেছে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন। এই রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ এবং সরকারি এমপিও সুবিধা আদায় করা হয়েছে।

ঘটনার গভীরে যেতেই উঠে আসে আরও বিস্ময়কর তথ্য। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আবু সুফিয়ানের স্বাক্ষরও রয়েছে জাল তালিকায়। তবে এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরিসংখ্যান বিভাগের একজন প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যূনতম ৬০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। অথচ বাস্তবে এই বিভাগে ছাত্র ছিল মাত্র ৪ জন। নিয়ম পূরণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলাম নিজের কার্যালয়ে বসে তৈরি করেন ৬৫ জন শিক্ষার্থীর একটি জাল তালিকা। এতে ব্যবহার করা হয় অন্য বিভাগের বা বাইরের শিক্ষার্থীদের নাম, ছবি ও জাল স্বাক্ষর। এমনকি অভিভাবকদের সই পর্যন্ত নকল করে।

এই জাল রেজিস্ট্রেশন কলেজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চলের ওয়েবসাইটে আপলোড করে। তালিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তারা যথাযথ যাচাই না করেই সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে পাস করেন।

এক শিক্ষার্থী তাসমিয়া কেয়া বলেন, আমি পরিসংখ্যান বিভাগে পড়ি না, অথচ আমার নাম, ছবি এমনকি মায়ের স্বাক্ষরও ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ভয়ঙ্কর প্রতারণা!

আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তারা এই রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কিছুই জানত না। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কেউ কেউ আতঙ্কে কলেজে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

এ ঘটনায় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে আরএমপি কমিশনার মো. আবু সুফিয়ানের নাম ঘুরেফিরে আসছে। জাল তালিকায় তার সই স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তবে এ বিষয়ে ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন স্পর্শকাতর কাগজপত্র অনুমোদনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর থাকাটা আইনগতভাবে গুরুতর দায়িত্বের বিষয়। এতে তার প্রশাসনিক দায় এড়ানো যায় না।

শুধু প্রতারণাই নয়, নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বসানোর জন্যেও কৌশল নিয়েছেন মো. সফিকুল ইসলাম। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কলেজে তার আগে দুইজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেকে কাগজে ‘প্রথম সিনিয়র’ দেখিয়ে নিয়ম ভেঙে পদে বসেন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন চুক্তিভিত্তিকভাবে।

এ নিয়ে বোর্ডে আপত্তি তুললেও, প্রশাসনের নীরবতায় কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। বরং তাকে স্থায়ী করার উদ্যোগ চলছে।

এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বিপদে পড়েছেন যুক্তিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. মোকবুল হোসেন। তিনি জানান, “গত ৯ এপ্রিল অফিস সহকারী শিশির মোল্লার মাধ্যমে আমাকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয়। সেখানে প্রকাশ্যে বলা হয়—চাকরি খেয়ে ফেলব, গুন্ডা দিয়ে খুন করে ফেলব।”

তিনি রাজপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন এবং বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন থেকে কোনো জবাব মেলেনি। ঘটনার আইনি দিক বিশ্লেষণ করে জানান রাজশাহীর জজ কোর্ট ও বিভাগীয় শ্রম আদালতের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের এডভোকেট মো. সাইফুর রহমান খাঁন (রানা)।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় জালিয়াতি (ধারা ৪৬৮), প্রতারণা (৪২০), সরকারি তথ্য গোপন (২০১) এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎ (৪০৯) প্রযোজ্য। এসব ধারায় সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি সহকর্মীকে প্রাণনাশের হুমকিও জামিন অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ

এডভোকেট রানা আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অপরাধ সমাজের ভিত্তিমূলকে দুর্বল করে। আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের চক্র আরও বিস্তার লাভ করবে।

সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, এমন চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদিন প্রতারণার কারখানায় রূপ নেবে।

রাজশাহীর এক নাগরিক সমাজ নেতা বলেন, এই সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলাম ও চক্রের সদস্যদের বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চলের জড়িত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার এবং সকল জাল রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও পুনরায় যাচাই করার।

সুশীল সমাজ দাবি রাখছেন, শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। আর সেই মেরুদণ্ড যখন প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে আক্রান্ত হয়, তখন গোটা সমাজই দুর্নীতির চোরাবালিতে ডুবে যেতে বাধ্য।

রাজশাহীর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়। এটি গোটা দেশের শিক্ষা ও প্রশাসনিক নৈতিকতার চরম সংকটের প্রতিচ্ছবি। এখনই সময় এই সিন্ডিকেট ভেঙে সত্য, আইন ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবার।


এই বিভাগের আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের সবখবর
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!