চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে ঢাকা অভিমূখে সকল আন্তঃনগর ট্রেন চালু এবং যমুনা রেলসেতু হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডাবল রেললাইন স্থাপনসহ ৮ দফা দাবীতে মানববন্ধন, গণ স্বাক্ষর ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা। বুধবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১০ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে জেলা সুজনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা সুজনের সদস্য আমিনুল ইসলাম আবিরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মানববন্ধনের প্রধান আলোচক, রেল আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা এবং জেলা সুজনের সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল।
৮ দফা ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা সুজনের সভাপতি এ্যাড. নুরে আলম সিদ্দিকী আসাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সংগঠক আব্দুর রাহিম, মাহিন খাঁন ও সাব্বির আহম্মেদ, নাগরিক সংগঠক শওকত আলী, সমাজ কর্মী আব্দুল মজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডার্ণ মার্কেটের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাবুল আলী ইমন, নাচোল উপজেলা সুজনের সম্পাদক শাকিল রেজা, শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, ডাঃ ইসমাইল হোসেন, শাহনেওয়াজ খাঁন সিনা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহম্মদ ইসাহাক, কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল আখতার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ, চা দোকান মালিক সমিতির কামরুজ্জামান, চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক খাইরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের নেতা আব্দুর রহমান অনু, নাগরিক কমিটির আহবায়ক আবু হেনা বাবলু, প্রবীন হিতৌষী সংঘের আফসার আলী, ডাঃ মাহফুজ রায়হান, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মোখলেসুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র মাওলানা আব্দুল মতিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্যরা।
মানববন্ধনে বক্তারা, নানাভাবে অবহেলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসী আট দফা প্রাণের দাবি পুরণে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় দাবি আদায়ে সুজনের ব্যানারে জেলাবাসী বৃহত্তর কর্মসূচী দিতে পিছপা হবেনা।
জেলা সুজনের সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, দেশের রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত চলাচলের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীকে খুব ভোরে একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন বনলতার উপর নির্ভর করতে হয়। অথচ অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী জেলা পর্যন্ত এসে অযথা কালক্ষেপণ করে সেখানেই অবস্থান করে। যা দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সাথে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দোসররা জোরপূর্বক এসকল আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনে আটকিয়ে রাখে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষকে তাদের প্রাপ্য নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এসেছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি শুধুমাত্র বৈষম্যই নয়, চরম অমানবিকও বটে। এই অঞ্চলের সর্বশেষ রেলওয়ে ষ্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হওয়া স্বত্ত্বেও ধুমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতি আন্তঃনগর ট্রেনগুলো নানা’ন অযৌক্তিক অজুহাতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারী, শিশু এবং মুমুর্ষ রোগী অত্যন্ত কষ্ট করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হয়। ফিরতি পথে একইভাবে রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে পুনরায় বাসযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর সহ ভোলাহাট, শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর এবং নওগাঁ জেলার পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলাসহ পাশ^বর্তী অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে যাতায়াত করেন। ফলশ্রুতিতে আমরা এই অঞ্চলের জনসাধারণ দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন হতে সকল আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের জোর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ মানুষের যৌক্তিক দাবীকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করে নায্য দাবী থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, ভ্রমণসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় শহর এবং রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন। কিন্তু রেলপথ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আন্তঃনগর ট্রেন না থাকায় মানুষকে চরম পর্যায়ের ভোগান্তির শিকার এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মূখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া জরুরী ক্ষেত্রে চিকিৎসাধীন রোগী দ্রুত চিকিৎসা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত এবং প্রতিনিয়ত কষ্ট ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রধান আলোচক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে সকল আন্তঃনগর ট্রেনসমুহ চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত যেমন সহজলভ্য এবং দ্রুততর হবে, তেমনি শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ ও চিকিৎসাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই রুটে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা) আন্তঃনগর ট্রেন প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল হওয়ায় যাত্রীদের সড়কপথে দীর্ঘ ভোগান্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করতে হয়। তেমনি যাত্রা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকি ও ভোগান্তিপূর্ণ এবং বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত আর্থিক ব্যয় নির্বাহের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চরম বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় ধুমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতি আন্তঃনগর ট্রেন সমুহ অযথা রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনে বসিয়ে রাখার ফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি নায্য অধিকার বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর পক্ষে এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঘোষিত আট দফা দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত ৫৪ বছরে কোন রাজনৈতিক সরকার বিষয়টি গুরুত্ব তো দেয়নি বরং অবহেলা করেছেন আর ভোটের রাজনীতির মাধ্যমে বৈষম্যে সৃষ্টি করেছেন। অথচ আমারা জেলা সম্পাদক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী আম ও ধানের মত শষ্য ফলিয়ে জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে