আমার পুলিশ,আমার দেশ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এই মূলমন্ত্রকে উদ্দেশ্য করে সামনে রেখে মঙ্গলবার ৩৪ তম বর্ষে পদার্পণ করলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এ উপলক্ষে বৃষ্টি ভেজা সকালে আরএমপির সদর দপ্তরে ছোট কিন্তু বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল। পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী বক্তব্য আর জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা,আর আহতদের সুস্থতায় মোনাজাতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি,সারদা পুলিশ একাডেমীর অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান,রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার,ডিআইজি মো: শাজাহান।
এরপর বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। শেষে আরএমপি কনফারেন্স কক্ষে কেক কাটা শেষে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা সভা। বড় পর্দায় মোটাদাগে তুলে ধরা হয় আরএমপির ৩৩ তম বছরের কর্মকান্ড। ১৯৯২ সালের ১ জুলাই গ্রীন সিটি ক্লিন সিটি শিক্ষানগরী রাজশাহী মহানগরীতে ৯২ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চারটি থানা নিয়ে স্বল্প জনবল দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে বরোটি তানা নিয়ে ৪৭২ বর্গ কিলোমিটারে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। তবে এবারের বার্ষিকী এসেছে এক অনন্য প্রেক্ষাপটে- আগস্টের সহিংসতা, পোড়া অবকাঠামো, লুট হওয়া অস্ত্র আর চ্যালেঞ্জের সাগর পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম এখনো চলছে। একদিকে ক্ষয়ক্ষতির পাহাড়, অন্যদিকে সাহসিকতা ও পুনর্গঠনের স্বাক্ষর- এই দ্বৈত বাস্তবতা নিয়ে ৩৪ বছরে পা দিল নগর পুলিশ।
সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক ছিল অস্ত্র লুট। সহিংসতার সুযোগে দুর্বৃত্তরা লুট করে নেয় ১৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্র। লুট হওয়া ১৬৪টি অস্ত্রের মধ্যে ১৪৭টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাকি ১৭টি অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের হাতে রয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে,যা নগরীর নিরাপত্তার জন্য বড় একটি হুমকি।
সংকটকালীন সময়েও থেমে থাকেনি আরএমপির নিয়মিত কার্যক্রম। নাগরিকদের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চালু করা হয়েছে ‘আরএমপি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। এ ছাড়া আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ৩৯৪ টি হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে,যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে।
চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু মামলার আসামি গ্রেপ্তার করে নগরবাসীর আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে আরএমপি। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার মূলহোতা,অটোরিকশায় যৌন হয়রানির আসামি,রাজশাহীতে গত বছরের ৫ আগস্ট দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলিবর্ষণকারী এবং পবা উপজেলায় টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার।
আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, “পোড়া ক্ষতকে শক্তিতে রূপান্তর করে জনগণের নিরাপত্তাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। গত বছরটি আমাদের জন্য একটি কঠিন অগ্নিপরীক্ষার বছর ছিল। আগস্টের নজিরবিহীন সহিংসতায় আমরা আমাদের অবকাঠামো ও মনোবল- উভয় ক্ষেত্রেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আমি গর্বের সাথে বলতে চাই, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন আমাদের সামনে চারটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এরমধ্যে নির্বাচন,অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা। আলোচিত সব মামলার আসামি গ্রেপ্তার,মাদক উদ্ধার এবং নাগরিক সেবা,রাজশাহীর শান্তিপ্রিয় জনগণের সহযোগিতা আমাদের মূল শক্তি। আপনাদের আস্থা নিয়েই আমরা একটি নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত রাজশাহী গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আরএমপি এখন আগের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও প্রস্তুত।