রাজশাহীতে ভুয়া শিক্ষা সনদ দিয়ে দলিল লেখকের করা লাইসেন্স বাতিল করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুর রকিব সিদ্দিক। ওই ভুয়া শিক্ষা সনদধারী দলিল লেখক হলেন পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের শাহীন আলী, সনদ নং ১০৮।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভুয়া সনদ দিয়ে লাইসেন্স করায় সে'টি বাতিল করা হয়েছে। উক্ত শাহীন আলীর বিরুদ্ধে নানা প্রকার অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার শিক্ষা সনদটিতে সন্দেহ হলে সেটা যাচাই-বাছাই করার জন্য পবা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার নিজেই শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে দেখেন শিক্ষা সনদটি ভুয়া এবং শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সনদটি ভুয়া বলে প্রত্যয়ন দেয়। এরপর উক্ত বিষয়ে পবা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করলে তাহার বিরুদ্ধে অফিশিয়ালি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উক্ত শাহীন আলী, সনদ নং-১০৮ এর দলিল লেখার লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
প্রথমদিকে ওই ভুয়া শিক্ষা সনদটি যাচাই-বাছাই না করেই ‘সঠিক’ বলে প্রত্যয়ন দেয় শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় বোর্ডজুড়ে শুরু হয় কানাঘুষা, সমালোচনা আর প্রশাসনিক অস্থিরতা। তুমুল সমালোচনা মধ্যে পবা সাব রেজিস্ট্রার শাহীন আলী নিজে যাচাই করলে দ্বিতীয়বারে ডেপুটি কন্ট্রোলার (এসএসসি) মো. মুনজুর রহমান খান যাচাই শেষে প্রত্যয়ন দেন— “Verified and found not correct” — অর্থাৎ সনদটি ভুয়া।
ঘটনার সূত্রপাত রাজশাহীর পবা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে। সেখানে কর্মরত দলিল লেখক শাহীন আলীর এসএসসি সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে। ওই সনদে উল্লেখ ছিল—রোল নং ৬২৩৭১৩, রেজিস্ট্রেশন নং ৬১৭৩৮২, পাশের সন ১৯৯৭, বিদ্যালয় দারুশা উচ্চ বিদ্যালয়। ওই ভুয়া সনদ দিয়ে তিনি দলিল লেখকের লাইসেন্স করেন।
এ বিষয়ে পবা সাব রেজিস্ট্রার শাহীন আলী বলেন, একজন দলিল লেখকের শিক্ষা সনদ যাচাইয়ের জন্য প্রথমে আমরা অনলাইন ও মোবাইলে চেক করি। সেখানে রোল নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বরে অন্য কারো নাম আসছিলো। এতেই আমাদের সন্দেহ হয় শিক্ষা সনদটি ভুয়া। অফিশিয়ালি দরকার লিখিত প্রত্যয়ন। এ কারণে শিক্ষা বোর্ডে যাচাইয়ের জন্য দেওয়া হয়। প্রথমে তাঁরা সনদটি সঠিক মর্মে প্রত্যয়ন দিলে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়। পরে আমি নিজে স্বশরীরে যাচাইয়ের জন্য যাই। এরপর যাচাই করে ডেপুটি কন্ট্রোলার মঞ্জুর রহমান খান বলেন এটি সঠিক সনদ নয়। ভুয়া সনদ দেওয়া দলিল লেখকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রথমবার যাচাইয়ের সময় শাহীন আলী মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বোর্ডের তিন কর্মকর্তা—রেকর্ড শাখা অফিসার আলমগীর হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারজানা লতা ও মিন্টু—এর সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া সনদটিকে ‘সঠিক’ বলে প্রত্যয়ন করান।
তখন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেকর্ড শাখা অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, “ভুলবশত প্রত্যয়নটি দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরাই বুঝতে পারি সনদটি ভুয়া।”
একই সুরে কথা বলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারজানা লতা।
ডেপুটি কন্ট্রোলার মো. মুনজুর রহমান খান জানান, “সনদটি ভুয়া। প্রথমে রেকর্ড শাখার মিন্টু নামের এক কর্মচারীর ভুলে এমন হয়েছে। বোর্ড তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।”
বোর্ডের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, “এ ধরনের অনিয়ম শিক্ষা বোর্ডের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রয়োজন দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত।”
ঘটনাটি এখন রাজশাহীর প্রশাসনিক মহলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কেউ বলছেন এটি কেবল একটি সনদের জালিয়াতি নয়, বরং শিক্ষাপ্রশাসনের নৈতিকতার এক ভয়াবহ সংকেত।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আ.ন.ম. মোফাখখারুল ইসলাম বলেন এ ঘটনা সম্পর্কে পরে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি জানার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।