রাজশাহীর দুর্গাপুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের নাম ভাঙ্গিয়ে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। অভিযুক্ত প্রতারকের নাম জুবায়ের ওরফে (পাখি) তুহিন। তিনি উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। ভুক্তভোগীরা জানান এই প্রতারকের সাথে জড়িত রয়েছে আরও ৩/৪ জন।
জানাগেছে, অভিযুক্তরা নিজেদের দুর্গাপুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খননকারীদের কাছে গিয়ে চাঁদা ও অনুমতির নামে লাখ-লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। তারা খননকারীকে বলেন দাবিকৃত এসব অর্থ সাংবাদিকদের কল্যাণে ও প্রেসক্লাবের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আদায়কৃত অর্থ কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠনে জমা দেয়নি। অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, প্রতারক তুহিনসহ ক’জন সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আসছে। বাস্তবে তারা প্রেসক্লাবের বৈধ সদস্য নয়। এমনকি সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মুলত নিজেদেরকে প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বিগত দিনে পুকুর খননকারীদের নিকট থেকে সহযোগিতা’র নামে প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু উক্ত অর্থের বিপরীতে কোনো রসিদ প্রদান করেনি এবং সংগঠনের তহবিলে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করেছে। এ ঘটনার ফলে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একাধিকবার সতর্ক করার পরও এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না করে (পাখি) তুহিনের নেতৃত্বে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এক ভুক্তভোগী পুকুর খননকারী বলেন, তুহিনসহ আরও ২/৩ জন “আমাদের ভয় দেখিয়ে বলা হয় সংগঠনে টাকা না দিলে পুকুর খননের বিরুদ্ধে নিউজ হবে। সম্মান বাঁচাতে ও ঝামেলা এড়াতে আমরা বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছি। পরে বুঝতে পারি এটি তাদের পুরোপুরি প্রতারণা।”
স্থানীয় এক বিএনপি নেতা জানান, গত কয়েকমাস আগে তুহিনসহ কয়েকজন ঝিনারমোড় এলাকায় নিজেদের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের পরিচয় দিয়ে পুকুর খননের কাজে লিপ্ত ছিলেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে ২ লাখ আর সাংবাদিক সংগঠনের নামে এক লাখ হাতিয়ে নেয়। পরে জানতে পারি প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাত করেছে। এই টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুকুর খনন পার্টনারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।
প্রতারক তুহিনের এলাকার এক বাসিন্দা জানান, শুনেছি তুহিন বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়ান। কিন্তু এলাকার মানুষ জানে পুকুর খননের মৌসুমে দালালি করায় তার কাজ। পুকুর খননের পাশাপাশি তুহিন পাখি পালনের নামে আটক রেখে বেচাকেনা করে। এলাকার মানুষ তাকে (পাখি) তুহিন নামেই চিনে। পরে কয়েকজনের কাছে জানতে পারি সে (পাখির) ঘর থেকে একটি অনলাইনে রাজশাহী রিপোর্টার হয়ে কাজ করে। _যা হাস্যকর!
দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি জীবন আলী সবুজ (কোরবান) বলেন, “প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার সাথে তুহিনসহ যারা জড়িত আছে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তিনি বলেন, এই প্রতারকের সাথে জড়িত কেউ যদি সাংবাদিক পরিচয়ে অর্থ দাবি করে তবে অবশ্যই তাদের পরিচয় যাচাই করে ব্যবস্থা নিবেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করছি। তিনি আরও বলেন, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজ সবসময় ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সাংবাদিকতার সুনাম রক্ষায় আমরা আইনগত ও সাংগঠনিকভাবে আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম জানান, এব্যাপারে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের প্রতারণা চালানো হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। ####