কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুইজন রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস অফিসের পেছনে পাহাড়ে পানির ট্যাংকি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তিরা যুবলীগের নেতা মো. ওমর ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি। তাঁরা বিভিন্ন সময় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
নিহত দুই রোহিঙ্গা হলেন উপজেলার হ্নীলার নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সি ব্লকের ১ নম্বর শেডের ৮৩৮ নম্বর বাসার বাসিন্দা জমির আহমদের ছেলে আবদুল করিম (২৪) ও একই শিবিরের ২ নম্বর শেডের ৮৮০ নম্বর বাসার বাসিন্দা সৈয়দ হোসেনের ছেলে নেছার আহমদ ওরফে নেছার (২৭)। করিমের বাড়ি মিয়ানমারে আকিয়াবের জেলার মংডু শহরের হাসুরাতায়। নেছার একই শহরের পুঁইমালি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন এএসআই কাজী সাইফ উদ্দিন, কনস্টেবল নাবিল হোসেন ও রবিউল ইসলাম।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেছেন, গতকাল রাতে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস অফিসের পেছনে পাহাড়ের পানির ট্যাংকির এলাকায় যুবলীগের নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার কয়েকজন পলাতক আসামি অবস্থান করছেন—এমন তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এ সময় পুলিশের তিন সদস্য এএসআই কাজী সাইফ উদ্দিন, কনস্টেবল নাবিল হোসেন ও রবিউল ইসলাম আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ডাকাত দলের অন্যরা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আবদুল করিম, নেছার আহমদসহ পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দ্রুত টেকনাফ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দুজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি ২টি অস্ত্র (এলজি), শটগানের ৭টি তাজা কার্তুজ, ৯টি কার্তুজের খালি খোসা উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক শঙ্কর চন্দ্র দেবনাথ বলেন, রাতে পুলিশ পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে আবদুল করিম ও নেছার আহমদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল । তাঁদের শরীরে দুটি করে গুলি লেগেছিল। এ ছাড়া আহত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন>বলেন, গুলিবিদ্ধ দুজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, গত ২২ আগস্ট রাতে টেকনাফে হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও জাদিমোরা এম আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুককে (৩০) জাদিমোরা এলাকায় তাঁর বাড়ির সামনে থেকে রোহিঙ্গা ডাকাত সরদার মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাঁকে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত ফারুকের বাবা মোহাম্মদ মোনাফ বাদী হয়ে পরদিন টেকনাফ থানায় ১৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন রাতে মামলার চার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তাঁদের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা ডাকাত। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ শাহ ও মো. আবদুস শুক্কুর। অন্য দুই আসামি হলেন মোহাম্মদ হাসান ও নুর মোহাম্মদ। নুর প্রধান আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বন্দুকযুদ্ধ ও মাদকে প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ২ জন নারীসহ ১৫৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক নারীসহ ৩৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিকও রয়েছেন।