বাংলাদেশের মিষ্টির সাথে জড়িয়ে আছে সাতক্ষীরার বিখ্যাত মিষ্টির নাম। সাতক্ষীরার মিষ্টির স্বাদ গ্রহন করেননি এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম।এখানকার ময়রাদের হাতের জাদুকরী ছোঁয়ায় নানা রঙের নানান স্বাদের মিষ্টি তৈরি হয়।নানান মিষ্টির পাশাপাশি সাতক্ষীরার সন্দেশও বেশ নামকরা। এই মিষ্টান্ন রসনা মেটাচ্ছে সারা দেশবিদেশের মিষ্টিপ্রেমী মানুষের। সাতক্ষীরার ফকির ময়রার সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নের স্বাদের সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে সবখানেই। জেলার ঐতিহ্যবাহী ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ঘোষ ডেয়ারী, সাগর সুইটস, ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন,কানা ময়রার তৈরি সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দই ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশে। এছাড়া মাতৃভাণ্ডার, জায়হুন ডেইরি শপ, সুশীল ময়রা, সাহা ও নুর সুইটসের মিষ্টি স্বাদে ও মানে অনন্য। সাতক্ষীরার ঘোষ সম্প্রদায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘সাতক্ষীরা ঘোষ’ ডেইরির নামে এখন দেশের প্রায় সব জেলাতেই রয়েছে মিষ্টির দোকান।
এসব প্রতিষ্ঠানে তৈরি রসমালাই, কুসুমভোগ, ছানার জিলাপি, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক, বালিশ চমচম, দানাদার, দুধ মালাই, ক্ষীর সন্দেশ, রসগোল্লা ও দইয়ের চাহিদা বেশ। এছাড়া শীতের সময় উৎপাদিত নলেন গুড়ের সরপুরি ও প্যাড়া, সাদা সন্দেশ, রসমালাই মিষ্টির স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। জনপ্রিয় এসব মিষ্টির তৈরি শুরু হয় মূলত ষাটের দশকে। সে সময় গোলাম মোহাম্মদ ফকির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা শহরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। এটিই জেলার প্রথম মিষ্টির দোকান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও পরিচিতি রয়েছে ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের। বর্তমানে আদি ‘ফকির মিষ্টান্ন ভান্ডার’ ও ‘ফকির মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামে দুটি দোকানে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই সময়ে শেখ আব্দুর রশিদ নামে আরো একজন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠা করেন হোটেল সাগর (যার বর্তমান নাম সাগর সুইটস)। ভারতসহ সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে সাগর সুইটসের। আর ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে দইসহ অন্যান্য মিষ্টি বিক্রি করছে।
সাতক্ষীরায় মিষ্টি শিল্পের সফলতার বিষয়ে এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিস্তীর্ণ চারণ ভূমি থাকায় অনেক আগে থেকেই সাতক্ষীরার প্রায় বাড়িতে গরুর পালন করা হতো। তাছাড়া অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখন বাণিজ্যিকভাবে নতুন নতুন গরুর খামার গড়ে উঠেছে। সরকারি হিসেবে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা সাতক্ষীরা। দুধের সহজলভ্যতা এই জেলার মিষ্টি উৎপাদন ও বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া এখানে উৎপাদিত মিষ্টির দামও অনেক কম।
ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ম্যানেজার বলেন, ‘আমাদের কারখানায় প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে চারশ’ কেজি দুধের মিষ্টি তৈরি হয়। তৈরির পরপরই বিক্রি হয়ে যায় সব। তবে সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পাইকারি বা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয় না। আমরা মিষ্টিতে খাঁটি গরুর দুধ ব্যবহার করি। এতে অন্য কিছু ভেজাল দেই না। এমনকি আমাদের অন্য কোথাও কোনো শাখা নেই।’ মিষ্টির স্বাদ, গুণ ও মানে পুর্বের মিষ্টির সাথে বর্তমানের মিষ্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, দেশি গরুর দুধের মিষ্টি ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশি গরুর দুধ পাওয়া দুষ্কর। ফলে স্বাদে কিছুটা পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। তবে মিষ্টি তৈরিতে কোনো কেমিক্যাল বা ভেজাল দেয়া হয় না।
সাগর সুইটসের ম্যনেজার রেজাউল করিম বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। এটি এখনো সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। আমাদের মিষ্টি নিয়ে কেউ কোনোদিন অভিযোগ দিতে পারেনি। যারা সাতক্ষীরায় আসেন তারা সাগর সুইটস বললে এক নামে চেনেন।’ নতুন করে জনপ্রিয় হওয়া জায়হুন ডেইরি শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম, দেশে ফিরে গরুর খামার করি। নিজের খামারে প্রতিদিন কয়েক’শ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। সেই দুধ দিয়েই মিষ্টি তৈরি করছি। বর্তমানে আমরা বিদেশ থেকে আনা মানবদেহের জন্য উপকারী বিশেষ ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ভিন্ন স্বাদের মিষ্টি তৈরি করছি।’