ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও কপোতাক্ষ নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকার আকাশ গুমোট আকার ধারণ করে মাঝে মাঝে বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বইছে। ভোর রাত থেকে উপকূলীয় শ্যামনগর এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ এবং বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষদেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন সূত্র।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাইকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য। শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫ ও ১৫ নম্বার পোল্ডারের ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সাতক্ষীরায় ২ নম্বর দুরবর্তী হুসায়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে ৪৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিমে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে। এটি ধীরগতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলিমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬.৬ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
২৬ মার্চ ভোর নাগাদ উপকূলে চলে আসতে পারে ।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা এলাকার শফিউল আজম লেনিন বলেন, ‘আকাশ গুমোট আকার ধারণ করেছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয় হচ্ছে কখন যে কি ঘটে যায়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে অনেকে বিকালে আসবে। গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর সোরা, ডুমুরিয়া এবং গাবুরার ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাধের নাজুক অবস্থা। জলোচ্ছ্বাস হলে কী হবে আল্লাহ জানেন।’
গাবুরার ইউনিয়ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকোশলী সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘এখন পূর্নিমার গণ সে কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাধের সমস্যা সেখানে বালির বস্তা এবং জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার ভাটার তুলনায় পানি তিন থেকে চার ফিট বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢেউও বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলো মেরামতের জন্য জিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
সাতক্ষীরা শ্যানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা আনম আবুজর গিফারী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। আমাদের চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ, নৌবাহিনী, বিজিবি, গ্রাম পুলিশ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ করছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার কাজ এখনও শুরু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২টি মেডিক্যাল টিম ও উপজেলায় একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।