বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার নদী বা খাল পাড়ের অবৈধ স্থাপনা দুই বছরেও উচ্ছেদ না হওয়ায় থেমে আছে খনন কাজ। পড়ে আছে সরকারি বরাদ্দ। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, উচ্ছেদের তালিকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দিলেও উচ্ছেদ হচ্ছে না! প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ার ফলে একদিকে যেমন খনন হচ্ছে না, তেমনি আশেপাশের মরা চিত্রা নদী, মরা বলেশ্বর নদীসহ খননকৃত নদী খালের গতিপ্রবাহ আটকে পড়ে আছে। উপজেলা সদরের পাশের খননহীন হক ক্যানেল (মরা মধুমতি) তার নাব্যতাহীনভাবে পড়ে আছে। সেখানে নানা ময়লা আবর্জনা জমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। হক ক্যানেল এলাকার চাষাবাদ ও নৌযোগাযোগ এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।
মরা মধুমতি বা হক ক্যানেল খননের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শামীম ব্রাদার্সের মালিক এমডি শামীম আহসান জানান, অবৈধ স্থাপনার কারণে খাল খনেনর স্ক্যাভেটর নদী পাড়ে নেয়া যাচ্ছে না। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আমরা বার বার তাগিদ দিচ্ছি। কিন্তু কেন যে বিষয়টিকে গুরম্নত্ব দেয়া হচ্ছে না বুঝিনা। বিকল্প পদ্ধতিতে খনন করা যায় কি-না ভাবছি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চিতলমারীতে ‘বাগেরহাট জেলার পোল্ডার নং-৩৬/১ এর পূনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দে শুরম্ন হয় মরা চিত্রা, মরা বলেশ্বর, মরা মধুমতি নদীসহ পাঁচটি নদী, ৫৫টি খাল খনন এবং পাঁচটি স্স্নুইচগেট নির্মাণের কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যÿদর্শীরা জানান, তখন উচ্ছেদের জন্য মরা নদী বা খাল পাড়ের অবৈধ স্থাপনায় ‘লাল রঙ’ চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের নানা কৌশলের ফলে সেই লালরঙ চিহ্নিত স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। এমনকি নদীর দুই পারের বাসিন্দারা দাবী করে, নদীর মধ্যে তাদের দাবীকৃত জায়গা রয়েছে! এক পর্যায়ে থমকে যায় খনন কাজ।
চিতলমারী বাজারের ব্যবসায়ী শহীদুর রহমান, সুভাষ মজুমদার, তাপস বাড়ৈ সহ অনেকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদী, খাল বাঁচিয়ে রাখার উপর গুরম্নত্ব দিয়েছেন। যদি কেউ খাল নদীর মধ্যে বা পাশে তার জায়গা আছে বলে দাবী করেন এবং প্রমাণ করতে পারেন- তাহলে প্রয়োজনে সরকার ওই মালিকদের জায়গার দাম দিয়ে নদী, খাল বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
হক ক্যানেলের তীরবর্তী কুড়ালতলা (রত্নপুর) গ্রামের বাসিন্দা সংস্কৃতকর্মী আর্টিস্ট মীর মাসুদ বলেন, আমরা দেখেছি, সরকার ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচিয়েছেন। তাহলে চিতলমারীতে কেন অবৈধ স্থাপনার কারণে নদী, খাল খনন থেমে থাকবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাদের স্থানীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনও নদী খাল বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। সেই কারণেই শত শত কোটি টাকার বরাদ্দ হয়েছে। অচিরেই এই নদী, খালগুলো খনন করে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিতে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপÿের সজাগ হওয়া দরকার।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু হানিফ জানান, চিতলমারী বাজারের মরা চিত্রা, বলেশ্বর ও মরা মধুমতি (হক ক্যানেল) নদীর ত্রিমোহনা হতে শিবপুর ভূমি অফিস পর্যন্ত্ম যেসকল অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, তা জেলা প্রশাসকের পÿ হতে উচ্ছেদ না করলে খনন শুরম্ন করা যাচ্ছে না। হক ক্যানেলের ৯৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য তালিকা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই বছর আগে দেয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদ না হওয়ায় ঠিকাদার খনন কাজ করতে পারছে না। ওইসব অবৈধ স্থাপনার কারণে খনন কাজের স্ক্যাভেটর হক ক্যানেলের পাড়ে যেতে পারছে না। ঠিকাদার কাজও করতে পারছে না। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে আশেপাশের খননকৃত নদী খালগুলোর স্রোত বা গতিপ্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে আটকে থাকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য অসুস্থ্যতায় ছুটিতে আছেন জানিয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কৃষ্ণেন্দু বিকাশ সরকার বলেন, জেলা প্রশাসকের দপ্তরে উচ্ছেদের তালিকা দেয়ার পর করোনা শুরম্ন হয়। তাই হয়তো থেমে আছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ রাখছি। ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পরেই খনন কাজ শুরম্ন করা হবে। ইতোমধ্যে মরা মধুমতি (হক ক্যানেল) নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটারসহ অন্যান্য নদী, খাল খনন হয়ে গেছে। ২৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের যে সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার বিল সংশিস্নষ্ট ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। বাকী কাজ সম্পন্নের জন্য অপেÿমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের পÿ হতে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।