ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর মুসলিমবাগ ঘেঁষে, বাস্তা ইউনিয়নের পোথাইল গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি কাঁচা। এটি পাকা করার দাবি ২০ বছরের। বৃষ্টি হলে এ রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এই রাস্তা পাকা না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাড়ে তিন হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটি দিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ব্যাপক গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও রিকশা-ভ্যানচালকের মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। এলাকাবাসী জানায়, কাঁচা এই রাস্তাটি বৃষ্টিপাতের কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়। ঘন বর্ষার সময় জল কাঁদায় শিশু ও বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে এ রাস্তা। ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের আর উপায় থাকে না। বর্ষাকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না।
এছাড়া কর্দমাক্ত রাস্তা পাড়ি দিয়েই হাট-বাজারে যেতে হয় এলাকাবাসীকে। নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে আর কেউ এর খোঁজ রাখেন না।এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নেতা আসে নেতা যায় কিন্তু এ রাস্তা পাকা হয় না। বর্ষা এলে প্রতিবছরই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। হাঁটুসমান কাঁদামাটি পেরিয়েই এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দাস বলেন, রাস্তাটি অবস্থা এতই খারাপ যে এই এলাকার স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। এমপি, মন্ত্রী, মেম্বার ও চেয়ারম্যান বদলায় কিন্তু বদলায় না আমাদের এলাকার দুর্ভোগের চিত্র।
টুম্পা দাস জানান, বর্ষা মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত কাঁদার কারণে কোনো রিকশা এই রাস্তায় চলাচল করে না। তাই কোনো আত্মীয়স্বজনও এই গ্রামে আসতে চায় না। তিনি বলেন, গভীর রাতে প্রসবব্যাথা উঠলে রাস্তায় খানাখন্দের কারণে যানবাহন না থাকায় কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয় অন্তঃসত্ত্বাকে। এতে গর্ভের শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
মুসলিমবাগ গ্রামের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাঁদাপানি জমে থাকে। তখন রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে পারে না। এমনকি হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে।
রিকশা চালক আব্দুর রহমান বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশা চালাতে গিয়ে প্রায়ই নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। ফলে সারা দিন রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করি, তার একটা অংশ মেরামতেই শেষ হয়ে যায়। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট। ২০ বছর ধরে এ রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এ সময় কলেজছাত্র মোহনদাস বলেন, রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ-সবল মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। অনেক সময় রিকশায় করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে তাঁদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে।
বাস্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আশকর আলী বলেন, রাস্তাটির দুর্দশার ভোগান্তি আমার নজরে থাকলেও ঐ রাস্তাটির কাজ করার আমার এখতিয়ার নেই। আমি আসন্ন নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হলে ভেবে দেখ।
তেঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লাট মিয়া বলেন, ঐরাস্তাটি আমার ইউনিয়নের আওতাধীন। কথা দিচ্ছি নির্বাচনে নির্বাচিত হলে রাস্তাটি মেরামত করে দিবো। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমরা শিগগিরই ঐ এলাকা পরিদর্শনে যাব। এ বছর অবশ্যই সড়কটি পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।