কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। এ উপজেলার ১৬টি ইটভাটার মধ্যে ৭টিই অবৈধ। এ অবৈধ ও অপরিকল্পিত ইটভাটার জন্য উপজেলার কৃষি জমি, খেজুর গাছ, পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
বৃহ¯পতিবার দুপুরে শহরের সমাধান কার্যালয়ে এসব সংরক্ষণে করণীয় বিষয়ের উপর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংলাপে ভুক্তভোগী কৃষকেরা অবৈধ ও অপরিকল্পিত ইটভাটা বন্ধ করে কৃষি জমি এবং খেজুর গাছ সংরক্ষণের দাবি জানান।কৃষি জমিতে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা ইটভাটা এ উপজেলার ভুক্তভোগী মানুষের যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিকল্পিত ইটভাটার নেতিবাচক প্রভাবে কৃষি জমি হচ্ছে সংকুচিত। ইট তৈরিতে মাটির উপরিভাগের (টপ সয়েল) উর্বর অংশ ব্যবহারে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এসব ভাটায় ইট পুড়ানোর কাজে কাঠসহ ব্যবহৃত হচ্ছে খেজুর গাছ। এর ফলে প্রতিনিয়ত খেজুর গাছ বিলুপ্তির পাশাপাশি এই এলাকার রস ও গুড়ের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণসহ ফসল উৎপাদন ব্যহত ও ভাটার বেপরোয়া গাড়িতে রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি এবং সড়ক দুর্ঘটনার কথাও তুলে ধরা হয় সংলাপে। এছাড়া অপরিকল্পিত ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা কৃষকদেরকে মারধরসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।সংলাপে কৃষি জমি, খেজুর গাছ, পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে- কৃষি জমি থেকে ইটভাটা অপসারণ, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার না করে গবেষণার ভিত্তিতে কাঁচামাল সংগ্রহ করা, বিকল্প ইট তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করাসহ খেজুর গাছ সংরক্ষণ ও নতুন গাছ লাগানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়।বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক কাজী মাহফুজুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান, উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবির ও ইটভাটা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরমান গাজী, সমাজকর্মী বাবর আলী গোলদার। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, কৃষক আব্দুস সাত্তার, কৃষক আন্দোলন কর্মী মফিজুর রহমান নান্নু, খেলাঘর আসরের সভাপতি আব্দুল মজিদ, বেলা নেটওয়ার্ক সদস্য শরিফুল ইসলাম সেলিম, শেখ সাইফুল্লাহ, ব্যবসায়ী শেখ শহিদুল্লাহ প্রমুখ।সংলাপে আসা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই কৃষি জমিতে অনুমোদনবিহীন ইট ভাটা গড়ে ওঠায় ফসলাদি ঠিকভাবে হচ্ছে না। তরিতরকারি লাগালেও ভাটার ধোঁয়া ও ধুলা-বালিতে সেটি বাজারজাতও করা যাচ্ছে না। অপরিকল্পিত ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করায় আমাদেরকে (কৃষকদের) মারধরসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলে এলাকার কৃষকেরা ফসলাদি ফলাতে পারবে।