কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া গ্রামের কৃষক শেখ তছলিম উদ্দীন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন। তার ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্টে’ তৈরি এই সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকেরা বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শে মাটির গুনাগুণ ঠিক রাখতে কৃষকরা তার উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহারে ঝুঁকছেন। এমনকি বিভিন্ন উপজেলা থেকে তার ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ খামার পরিদর্শন করতে আসছেন অনেকে।
জানা গেছে, উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া গ্রামের কৃষক শেখ তছলিম উদ্দীন কৃষি অফিসের পরামর্শে ২০১৩ সালে তার আবাদকৃত জমিতে ব্যবহারের জন্য সীমিত পরিসরে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরির উদ্যোগ নেন। চিংড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি খামার করে গোবর ও কেঁচোর সমন্বয়ে কেঁচো সার তৈরি করেন তিনি। তছলিম উদ্দীন নিজ জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ফসলের ব্যাপক ফলন পাওয়ায় আশেপাশের কৃষকেরাও উদ্বুদ্ধ হন। তখন থেকে এ জৈব সারের চাহিদা বাড়তে থাকায় ২০২০ সালে ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ নামে একটি খামার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষে ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের পৃথক ৩৫টি হাউজ তৈরি করেন। প্রতি হাউজে ১০ বস্তা গোবর ও ৫ কেঁজি কেঁচো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫ মণ কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন হয়। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তার এ খামার থেকে প্রায় ১৫০ মণ কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। যা তিনি প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া প্রতি কেজি কেঁচো ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। কেঁচো সার উৎপাদনকারী কৃষক তছলিম উদ্দীন বলেন, কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা জমির গুনাগুণ ঠিক রেখে অল্প খরচে যেন নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদন করতে পারেন এ লক্ষে ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ খামার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গতবছর কৃষি অফিস থেকে একটি ভার্মি কপোস্ট সেপারেটর মেশিন দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে এ খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে প্রায় এক লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তার এ খামারে ৫ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। খামারে কাজ করার সময় কথা হয় শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতুর সঙ্গে। তিনি বলেন, যশোরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষকেরা এখানে কেঁচো সার কিনতে আসেন। এখানকার উৎপাদিত কেঁচো সার সাতক্ষীরা গবেষণা কেন্দ্রেও পাঠানো হয়। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, কৃষক তছলিম উদ্দীনের ভার্মি কম্পোস্ট খামারে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন ও দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষা ‘কঁচো সারের জুড়ি’ নেই। এ জৈব সার মাটির পানি ধারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।