রোজা মানে শুধু উপোস আর ইফতার নয়! দিনের দীর্ঘতা এবং গরমের তীব্রতায় একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে প্রচণ্ড পিপাসাকে উপেক্ষা করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় সিয়াম সাধনা করে যাবে পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমান। পরকালীন সাফল্য লাভের আশায় শুধু পানাহারই ত্যাগ করবেন না তারা সেই সঙ্গে নিজেদের জৈবিক চাহিদাকেও নিয়ন্ত্রণ করবেন রোজাদাররা। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্যই তো তার খাদ্য, পানীয় এবং শাহওয়াত পরিত্যাগ করেছে। (বোখারি)।
রোজার আরবি ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ যার অর্থ পরিত্যাগ করা, বেঁচে থাকা। পানাহারের পাশাপাশি আল্লাহর নিষিদ্ধ সব ধরনের কথা ও কাজ থেকেও বিরত এবং বেঁচে থাকার নামই ‘সাওম’।
মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই হলো রোজা। টানা ১৫/১৬ ঘণ্টা না খেয়ে গরমের দিনে রোজা রাখা অনেকের কাছেই সমস্যা হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন বয়সের মানুষ ও বিভিন্ন রোগে ভুগছেন যারা। এ সময়টা বিশেষ নজর দিতে হবে তাদের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ওপর রোজার এ সময়সীমা আরো বেশি নির্ভর করে। একে তো প্রচণ্ড গরম তার ওপর পানাহার থেকে বিরত থাকলে ডিহাইড্রেশন, মাথা ব্যথার মত সমস্যা দেখা দিতে পার। তবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য রোজা ফরজ হওয়ায় সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজা রাখেন। গরমেও কীভাবে সুস্থভাবে থেকে রোজা রাখা যায় তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চললে সেটি সহজ হবে।
যেমন পর্যাপ্ত ঘুম:
ঘুম কম হলে মানুষ কাজ করার শক্তি হারায়। এ গরমে রোজা রেখে কম ঘুমালে হিট স্ট্রেস দেখা দেয়ার সম্ভাবনা দেথা দিতে পারে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোর। দিনের বেলা যেহেতু রোজা রাখা হয় তাই রাতে বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সেহেরি খাওয়া:
রমজান মাসে মুসলিমরা শেষ রাতে সেহেরি খেয়ে সারাদিন রোজা রাখার নিয়ত করে থাকেন। সেহেরি খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনের কর্মশক্তি জোগায় এ সেহেরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেহেরি না খেলে বা কম ঘুমালে হিট স্ট্রেস হতে পারে।
ক্যাফেইন বাদ দেওয়া:
রমজান মাসে চা, কফি, কোমল পানীয় না খাওয়াই ভালো। আর খেলেও তা যেন সেহেরির সময় না হয়। কারণ চা কফি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে দেয়। সেই সঙ্গে সেহেরিতে চা, কফি খেলে প্রসাবের সাথে শরীরের লবণ বের হয়ে যায় যা সারাদিন রোজা রাখার জন্য জরুরি।
সূর্যের আলোয় কম থাকা:
সূর্যে শরীরের উপকারী ভিটামিন ডি থাকলেও গরমে রোদের মধ্যে যত কম থাকা যায় ততো ভালো। যাদের রোদের ভেতর কাজ করতে হয় তাদেরকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে কাজের মধ্যে। না হলে রোজা রেখে গরমে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
তরল খাবার:
সারাদিনের প্রচণ্ড রোদ গরমে শরীরে পানি বা পানিজাতীয় খাবারের চাহিদা থাকে অনেক। ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত বেশি করে পানি পান করা ও পানি জাতীয় ফল, তরল খাবার খেতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার:
সারাদিন রোজা রেখে আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ ভাজাপোড়া খেতে খুব আগ্রহী। তবে প্রতিদিন এমন খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব খাবার খেলে শরীরের অনেক সমস্যা দেখা দেবে তারপর ওজন চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ জন্য তৈলাক্ত খাবার বাদ দিয়ে ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন, দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতে হবে। মাঝেমধ্যে চাইলে অল্প কিছু ভাজাপোড়া খাওয়া যেতে পারে।
ধীরে সুস্থে খাওয়া:
সারাদিন রোজা রাখার পর একসাথে সব খাওয়া ঠিক না। আস্তে ধীরে খাবার খেতে হবে। সারাদিনের রোজার পর ইফতারে খাওয়া হলে মস্তিষ্কের বিষয়টি বুঝতে ২০ মিনিট সময় লাগে। এজন্য ধীরে সুস্থে খাবার খেতে হবে। সেক্ষেত্রে খেজুর আর লবণ পানি রোজা ভাঙার উত্তম খাবার। এ খাবারগুলো দ্রুত মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে পারে।