ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্লাবিত সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় দূর্গতদের মাঝে চলছে হাহাকার। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুপার সাইক্লোন ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে একের পর এক ভেঙ্গেছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। এতে পানিতে ভাসছে উপকূলের শ্যামনগর, কালিগঞ্জ,আশাশুনি সহ কয়েকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। নদ-নদীর পানিতে উপদ্রুত এলাকার মিষ্টি পানির আধার ডুবে যাওয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ইয়াসের কয়েক ঘণ্টার তান্ডবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার বিস্তীর্ন এলাকার নদী রক্ষা বাঁধ তছনছ হয়ে গেছে । ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার সুন্দরবনঘেষা শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী,রমজাননগর,কৈখালী ও কাশিমাড়ি ইউনিয়ন এবং আশাশুনি উপজেলা সদর, প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলেও এখনও ভেঙ্গে যাওয়া অধিকাংশ পাউবো’র বেড়ি বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে নদীর লোনা পানিতে গ্রামের পুকুর ও টিউব ওয়েলসহ মিষ্টি পানির আধার গুলো এখনো ডুবে রয়েছে। সেকারনে দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে।
আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, বানভাসি মানুষের মাঝে সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র, বেড়িবাঁধসহ আশাশুনি- ঘোলা সড়কের উপরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। তার ইউনিয়নের হাজরাখালী, মাড়িয়ালা, কলিমাখালী, লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের বানভাসি মানুষ চরম দুর্দিনের মধ্যে রয়েছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এর নির্দেশে বানভাসী মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরাবরাহ করছে আশাশুনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে মেডিকেল টিমের সদস্যরা।
সুন্দরবন উপকূলীয় গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানিতে তার ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত। বিধ্বস্থ হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। লতাপাতা ও আবর্জনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে পানি। এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। পানির জন্য হাহাকার চলছে উপকূলজুড়ে। চারিদিকে পানি থৈ থৈ অথচ খাবার পানি নেই। নেই রান্নার পানি, গোসলের পানি। কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও কয়েক মাইল পথ পায়ে হেটে গিয়ে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের।
জেলা পরিষদের সদস্য আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের আব্দুল হাকিম মোড়ল জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্ট ভেঙ্গে যায়। এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়ে পুরো গ্রাম। নদীর লোনা পানিতে গ্রামের সব গুলো পুকুর তলিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এই গ্রামের মানুষের। প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পাশের গ্রাম থেকে প্লাবিত গ্রামবাসীদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে নতুন টিউব ওয়েল বসালোও তার পানি খাবার উপযোগি হচ্ছে না। ফলে এই গ্রামের দূর্গত মানুষের মধ্যে চলছে তীব্র খাবার পানির সংকট। তিনি দ্রুত গ্রামবাসীদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থার দাবি জানান।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম রসুল জানান, বেশ কয়েকটি স্থানে কপোতাক্ষের বাঁধ ভেঙ্গে পুরো চাকলা গ্রাম নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এই গ্রামের মানুষ বেড়িবাঁধসহ উচু স্থানে আশ্রয় নিলেও গ্রাম জুড়ে চলছে তীব্র খাবার পানির সংকট। সারা গ্রামের কোথাও এতটুকু খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। ইতিমধ্যে এই গ্রামের অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তার ইউনিয়নের কোলা, হরিষখালী, কুড়িকাউনিয়া ও চাকলাসহ একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ সংষ্কার করা সম্ভব না হওয়ায় এখনো প্লাবিত এলকায় নিয়মিত জোয়ার ভাটা চলছে। ফলে এসব এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে চাকলা সহ কয়েকটি এলাকায় বানভাসি মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। এই মুহুর্ত্বে ত্রাণের পাশাপাশি দূর্গতদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা অত্যান্ত দূরহ ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সুপেয় পানির ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এই মহূতে খাবার পানির জন্য দূর্গত এলাকার মানুষ রাস্তায় লাইন ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। স্থানীয় বেসরকারি কয়েকটি উন্নয়ন সংগঠন উপদ্রুত মানুয়ের জন্য যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য।
সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম,জগলুল হায়দার বলেন, উপকুলীয় এলাকা ও শ্যামনগরের দ্বীপ পদ্মপুকুর,গাবুরা ও রমজাননগরের সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম গোলাখালীতে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাধ নির্মান ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া চলছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কর্মীজীবি মানুষ কর্মর্হীন হয়ে পড়েছে । সাতক্ষীরা জেলায় প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলাকায় নদ ও নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারের তোড়ে জলোচ্ছাসে নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে বির্স্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জানমাল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে । এর থেকে পরিত্রান পেতে দরকার স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাধ নির্মান ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা । উপকুলীয় এলাকার মানুষ তারা ত্রান চায়না স্হায়ী নদী রক্ষা বাঁধ চায়।