সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে অস্বাভাতিক জোয়ার বৃদ্ধিতে উপকূল রক্ষিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ৫ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ারের সময় নদীতে হঠাৎ ৬/৭ ফুল পানি বৃদ্ধি পায়।
এসময় উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও কৈখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। মানুষের মনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুর রহিম জানান, কপোতক্ষ হঠাৎ জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাঁগড়ামারি ৩নং এলাকায় পাউবো বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে প্রবেশ করে। এতে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়। তাছাড়া যাবতীয় মৎস্য ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে।
৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ ও রব্বানী সহ অনেকেই জানান, এ অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় আবহমান কাল ধেরে এ অবস্থার সৃষ্টি। পাউবো কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। যেন তেন ভাবে নির্মিত পাউবো বাঁধ অল্প আঘাতেই নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যায়। যখনই দূর্যোগ সৃষ্টি হয় তখনই পাউবো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এতে ভোগান্তি কেবল জনগনের।
পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এড. আতাউর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসময় ঝাঁপা, সোনাখালী, পূর্ব ও পশ্চিম পাতাখালী সহ কামালকাটি এলাকা তলিয়ে যাবতীয় মৎস্য ঘের একাকার হয়ে যায়।
জোয়ারের পানি যেভাবে ভিতরে প্রবেশ করছে তাতে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম জানান পাউবো কর্তৃপক্ষের দায়-সারা কর্মকান্ডের জন্য এঅবস্থার সৃষ্টি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে অধিকাংশ পাউবো বাঁধ তলিয়ে জোয়ারের পানি ভিতরে প্রবেশ করে অধিকাংশ মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কামেশ মোড়ল বলেন, চুনা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাউবো বাঁধ ভেসে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ১০ গ্রাম আংশিক প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়ে। ইউনিয়নের অধিকাংশ মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সিরাজুল ও আঃ কাদের জানান, উপকূল রক্ষিত পাউবো বেড়িবাঁধ মজবুত না হওয়ায় সহজেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, সীমান্ত কালিন্দি নদীতে ৬/৭ ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাউবো বাঁধ ছাপিয়ে ইউনিয়নের ২২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পুরো এলাকায় মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.ন.ম. আবুজর গিফারী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সরকারী সাহায্য হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে নগত ২৫ হাজার টাকা ও ২টন করে চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।