করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশের আগেই সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আনা হয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকাদানে বিশ্বের প্রথম সারির ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চলে এসেছে।
বুধবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিল্ডিং অ্যা ফেয়ারার, হেলদিয়ার ওয়ার্ল্ড’; যার মর্মার্থ দাঁড়ায়- ‘সবার জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ি’। প্রতিপাদ্যটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা, সময়োচিত ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার মান সচল রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গ প্রণীত কোভিড-১৯ সহনশীল র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ ও বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলার জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাবিশ্ব এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে। আমাদের সরকার করোনা বিস্তারের প্রথম দিক থেকে একটি সমন্বিত ও কার্যকর কর্মসূচি হাতে নেয়। আমাদের সীমিত জনবল, চিকিৎসা-সামগ্রী ও জনগণের মাঝে করোনা রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি, করোনা টেস্টিং, টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান, সঙ্গনিরোধ, কোভিড হাসপাতাল স্থাপন, হাসপাতালে অক্সিজেনসহ জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীর ব্যবস্থা, চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন সূচক এখন ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। সারাদেশে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নানা ধরনের হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রামীণ, প্রান্তিক ও সুবিধা-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাসমান। গড় আয়ু ৭২.৬ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধের জন্য মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারসহ অন্যান্য নিরাপদ অভ্যাসসমূহ আমাদের মেনে চলতে হবে। করোনার পাশাপাশি আমাদের অত্যাবশ্যকীয় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা যেন কোনো ধরনের ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগীদের হাসপাতালের সঠিক সেবা প্রদানের যাবতীয় সামগ্রীর এখন কোনো রকম সঙ্কট নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ মহামারি মোকাবিলায় আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং সাহসী। এই সঙ্কটকালে সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সেবাদানকারীরা মৃত্যুবরণ করেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমি ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২১’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি