সুন্দরবন ডেস্কঃ ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ছোঁয়ার অপেক্ষা যেন ছিল না কারও। তবে সময়ের নিয়মিত গতিতেই মহাকালে বিলীন হয়ে গেলো আরো একটি বছর-২০২০। আকাশে আলোর ঝলকানি, থেমে থেমে পটকার আওয়াজ আর ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলে চিৎকার। বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন এবং পরিবার নিয়ে অন্যরকম এক আনন্দে মেতে উঠেছেন সবাই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই উদযাপন সীমাবদ্ধ আছে চার দেয়ালে আর বাড়ির ছাদে। সবার মনেই হয়তো নতুন বছরে নতুন একটি আশা, জ্বরা ও শোক মুক্তির আশা।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সকল দুঃখ-বেদনা ভূলে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে। এবারও হয়তো করোনা মুক্তির আশা নিয়ে বরণ করেছে ২০২১ সালকে। সেখানে নতুন বছর মানে প্রাণে নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা।
স্বভাবতই নতুন বছর নিয়ে এবার মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা করোনাভাইরাস মুক্ত বিশ্ব। তবে, করোনার টিকা ছাড়াও অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাসহ মানবসম্পদ তৈরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে আগামী বছরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, এটাই নতুন ইংরেজি বছরে সবার প্রত্যাশা।
সারা পৃথিবীর ইতিহাসে ২০২০ সাল, বিষাদের বছর হিসেবে থেকে যাবে। অভিশপ্ত এ বছরটিকে বিদায় দেওয়ার জন্য সবাই যেন উন্মুখ হয়েই ছিল। অনেকেই মনে করেন, জীবন ও জীবিকার ওপর আঘাতের যে চিত্র বছরজুড়ে মানুষ দেখেছে, গত ১০০ বছরেও তা দেখা যায়নি। কোভিড-১৯-এর আগের বিশ্ব আর পরের বিশ্বেও মধ্যে মিল কোন দিনই হবে না।
কোভিড-১৯ মহামারিতে লাখ লাখ মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছেন। সেই সঙ্গে কয়েক কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং অর্থনৈতিক খাতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ কোটির বেশি শিশু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ১২ হাজার ৪৯৬ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৭ হাজার ৫৩১ জন।
চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ক্রমেই মহামারি আকারে সংক্রমণ বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। পরে করোনা মোকাবেলায় মার্চের ২৬ তারিখ থেকে মে এর ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
হতাশা, আতঙ্ক আর বিষাদের বছরে নানা আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার মধ্য দিয়ে বছরটি পার করেছে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো হলেও বছরের তৃতীয় মাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শনাক্ত হয় করোনা ভাইরাস। কয়েক ঘণ্টা পর নতুন বছরে শুরু হলেও ২০২০ মানুষদের স্মরণীয় থাকবে নানা কারণে। এ বছরটিতে বেদনার গ্লানিই বেশি। বছরটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা দিয়েছে অনেক বেশি। এজন্য ‘অপয়া’ বছর হিসেবেই ২০২০ সালকে মনে রাখবে দেশের মানুষ।
গত হওয়া বছরের, ২০ মে দেশে নেমে আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়। পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে প্রাণ হারান ১৬ জন। তবে এ দুর্যোগে অনেক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
এর কিছুদিন পর ফের যুক্ত হয় বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি। ২৯ জুন রাজধানী ঢাকার শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হন; যা সারা দেশের মানুষের অন্তরে নাড়া দেয়।
এছাড়া বছরটিতে আলোচিত ছিলো ধর্ষণের ঘটনা গুলো। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ আর প্রতিবাদে সারা দেশ যখন উত্তাল হয়। ঠিক তখন ঘটে যায় অরেকটি অঘটন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ৩২ দিন আগে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বাজার সাথে সাথেই ক্যালেন্ডারের হিসেব থেকে মুছে ফেলা হলো আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর ২০২০ । বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে মহামারীর তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই পৃথিবীর বুকে আসলো আরেকটি নতুন বছর। করোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে। হতাশা, আতঙ্ক আর বিষাদের বছর ২০২০-কে পেছনে ফেলে!