ঝিনুক টিভি ডেস্ক-
২০১৬ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭১ জন মৃত ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখন নিজেদের জীবিত বলে দাবি করছেন। এসব ভোটার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করে বলেছেন, ইসি ভুল করে তাঁদের মেরে ফেলেছে। তাঁরা ভুল সংশোধন করে আবার তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন।
সম্প্রতি ইসির উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে এমন অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ বিষয়ে অবহিত করে ইসিকে চিঠি লিখেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা চালু হওয়ার পর প্রথম দিকে কয়েক দফার হালনাগাদে মৃত ভোটারদের নাম যথাযথভাবে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, তথ্য সংগ্রহকারী মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। ২০১৬ সালের হালনাগাদে মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার জন্য পারিশ্রমিক ঘোষণা করা হয়েছিল। যে কারণে তথ্য সংগ্রহকারী অতি উৎসাহী হয়ে জীবিত ব্যক্তিদের নাম মৃতের তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তবে ভোটার তালিকায় মৃত, বাস্তবে জীবিত—এমন ভোটারের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে ইসির কাছে কোনো হিসাব নেই বলে আবদুল বাতেন জানান। তিনি বলেন, ইসি নতুন করে যাচাই-বাছাই করে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করবে।
ইসি সচিবালয় থেকে জানা যায়, জকিগঞ্জের আবুল কালাম আজাদ (এনআইডি নম্বর-১৯৮১৯১১৯৪৮৫০০০০০৯) ও তাহমিনা আক্তার পপির (১৯৯৩৯১১৯৪৮৫০০০২৮০) ব্যক্তিগত তথ্য ইসির তথ্যভান্ডারে প্রদর্শিত হলেও ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম নেই। চট্টগ্রামের দক্ষিণ মোঘলটুলীর মোহাম্মদ সাদেক হোসাইনের (এনআইডি নম্বর-১৯৮৪৩৩২৩০০১১৯০৭৪৫) নাম মৃত বলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি জনপ্রতিনিধির প্রদত্ত সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদসহ ডবল মুরিং থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা ওই ব্যক্তির নাম পুনরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে ইসিতে পাঠিয়েছেন।
আরও জানা যায়, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের টেপাগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা শাহাদৎ হোসেন (এনআইডি নম্বর- ১৯৬৭১০১৯৪৭৯১৭৪২৫৫)। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। ভোটার তথ্যভান্ডারে তাঁর তথ্য মৃত বলে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই ব্যক্তিকে পুনরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বগুড়ার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে।
একইভাবে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা জানিয়েছেন, আমির হোসেন (এনআইডি নম্বর-৮৯১৩৭৫০৮৮৯২৮১) ঝিনাইগাতি উপজেলার বাতিয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর নামও মৃত্যুর কারণে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ব্যক্তির নামও পুনরায় তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুপারিশ করেছেন।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এবারের হালনাগাদেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জীবিত ভোটারের নাম মৃতের তালিকায় ঢুকে যাবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। কারণ, তথ্য সংগ্রহকারীরা যাচাই-বাছাই না করেই স্থানীয় লোকজনের মুখের কথায় বিশ্বাস করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে চিহ্নিত করে। গত ২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে। জানা যায়, ইসি এখন পর্যন্ত ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৬৫৩ জন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মৃত হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৬৩ জনের। এবারের হালনাগাদে প্রতিজন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩০ টাকা এবং প্রতিজন মৃত্যু ভোটারের তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০ টাকা করে সম্মানী ধরা হয়েছে।