মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করা এই সংগঠনটি অন্তত ৪ জন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দিয়েছেন। চরম অক্সিজেন সংকটের সময় কয়েকজন যুবকদের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্ব মহলে।
বিনা অক্সিজেনে, ঝড়ে পড়বে না কোনো প্রাণ- এই স্লোগান নিয়ে সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলায় এমডি লিটন, নুরুদ্দিন সিদ্দিকী, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, সোহরাব হোসেন, মোস্তফা জাহান, এস এম সবুজ, ইয়াসিন আরাফাত, আফজালুল বাসার রিজভী, হাসানুর রহমান, জি এম সোহেল রানা, শামীম হায়দার, শাহিনুর রহমান, রবিউল ইসলাম, হাসান রহমান, এমডি শাহিন, হালিম সুমন, এস এম ইব্রাহিম, সাইফুল গাজী ২০ জন যুবক “শ্যামনগর অনলাইন অক্সিজেন ব্যাংক” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালায়।
একপর্যায়ে তাদের এই মহতি উদ্যোগের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নির্ধারিত নম্বারে ফোন বা শ্যামনগর অনলাইন অক্সিজেন ব্যাংকের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা চাইলে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর বাড়ি।
গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগীরা।
শ্যামনগর অনলাইন অক্সিজেন ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবক এমডি লিটন ও নুরুদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক মিলে অক্সিজেন ব্যাংক চালু করি। এরপর থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেনের অভাব মেটাতে।আমাদের হটলাইন নাম্বার ০১৭১১-৩৬৩৩৪১ এই নম্বারে ফোন দিলে গভীর রাতেও মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।ইতিমধ্যে রমজাননগর ও কৈখালী ইউনিয়নে তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত দুই জন রোগীকে আমরা বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করেছি।
শ্যামনগর অনলাইন অক্সিজেন ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মফিজুর রহমান বলেন, মুক্ত বাতাসের অক্সিজেনের অর্থমূল্য নির্ধারণের মাপকাঠি নেই। তবে সেই অক্সিজেন যখন সিলিন্ডার বন্দি হয় তখন তার আর্থিক মূল্য ধরা হয়। আমরা চেষ্টা করছি সমাজের হৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহায়তায় বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সেবা দিতে।
মফিজুর রহমান আরো বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য সিলিন্ডারের পাশাপাশি একটা ফুল সেট এর প্রয়োজন হয়। একটি সেট তৈরি করতে আমাদের প্রায় ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। আমাদের দুটি সেট রয়েছে। একটি সেট রিফিল করা থাকলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৫শ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া যায়। তবে যদি কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি হয় সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। এই সিলিন্ডারগুলো সাতক্ষীরা থেকে রিফিল করা হয়। একবার রিফিল করতে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়। রিফিলটা মূল নয়, মূল হচ্ছে সেট তৈরি করা। বর্তমানে আমাদের দুটি সেট রয়েছে। আমাদের যদি আরো কয়েকটি সেট থাকত তাহলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারতাম। এ ব্যাপারে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন মফিজুর রহমান।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন জানান, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি শ্যামনগর অনলাইন অক্সিজেন ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। তিনি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এর পাশাপাশি এই সংগঠনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।