শ্রম ও উৎপাদন খরচ স্বল্প আবার ফলন বেশি হওয়ায় কৃষি ও খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল তালা উপজেলায় এবার মুখিকচুর আবাদ কৃষকের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে ওই সাদা সোনা বা মুখিকচু চাষ করে তালা উপজেলার কৃষকরা এখন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
গত বছর তালা উপজেলায় ১০০ হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে মুখিকচুর আবাদ হয়। এ বছর আবাদের পরিমাণ ১৮০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি অধিদপ্তরের।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সদর, খলিলনগর, জালালপুর ও ইসলামকাটী চাষীরা এবার মুখিকচু চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে তালা সদর ও খলিলনগর ইউনিয়েনে। এ উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে লাভজনক ফসল হিসেবে মুখিকচুর চাষ হয়েছে। এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে মুখিকচু চাষীরা জমিতে পরিচর্যা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে ওইসব এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুখিকচু চাষ খুবই লাভজনক। সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মুখির বীজ লাগাতে হয়। প্রতি বিঘাতে ৮০ থেকে ১শ’ কেজি বীজ লাগে। বপনের মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই কচুর ফলন ঘরে তোলা যায়। কাঠা প্রতি (৫ শতাংশ) কচুর ফলন হয় ১২-১৩ মণ। এক কাঠা জমিতে কচু আবাদ করতে খরচ হয় মাত্র এক/ দেড় হাজার টাকা। আর প্রতিমণ কচু বিক্রি হয় ৭-৮শ’ টাকা। কচু চাষে কেবল লাভ আর লাভ। কৃষকরা বলেন,কচু বিক্রি করতেও তেমন কষ্ট হয় না।
বাজারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকাররা কচু কিনে। এ কচু চাষ করায় চরের জমিতেও এখন তারা ৩ টি ফসলের আবাদ করতে পারছেন।
খলিলনগর ইউনিয়নের গোনালী নলতা গ্রামের কৃষক জানান, প্রতি বিঘাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে ৫৫ থেকে ৬৫ মণ মুখি পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এতে বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। তার মতে, দুই-তিন বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করে ৪ মাসেই লাখপতি হওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে সদরের ইউনিয়েনর বারুইহাটি, আগোলঝাড়া, ভায়ড়া, জাতপুর, ডাংগানলতা, আটারোই এবং খলিলনগর ইউনিয়নে দক্ষিণ নলতা, গংগারামপুর, হরিচন্দরকাটি, মহান্দী, তেতুলিয়া ইউনিয়নে তেতুলিয়া ও শুকদেবপুর গ্রামে প্রচুর পরিমাণে মুখিকচুর চাষ হয়েছে।
খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামের কৃষক মোমিন গাজী জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে এবার মুখিকচুর চাষ করেছে এই পর্যন্ত ৬০হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে তিন লক্ষাধিক টাকা মতো বিক্রি হবে।
তালা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস জানান, তালা উপজেলায় গত বছর ১০০ হেক্টরের কিছু বেশি পরিমাণ জমিতে মুখিকচু চাষ হয়েছিল। এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ হেক্টর জমিতে। আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এলাকায় মুখিকচুর চাহিদা রয়েছে। ঈদের পর চাষীরা মুখিকচু বাজারে তুলতে শুরু করবেন। তালা উপজেলায় কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে, আমরা সর্বসময় কৃষকদের সেবা দিয়ে যাবো।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা বেগম জানান, কৃষকরা মুখিকচু রোপণ করার পাঁচ-ছয় মাস পর বিক্রি করতে পারেন, এই ফসলের উৎপাদন খরচ খুব কম, পাশাপাশি রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় খুব কম, গত বছরের তুলনায় এবার মুখিকচুর আবাদ বেড়েছে। এমনকি লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে এবার।