নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ী কাঠামোগত রূপ দেয়াসহ কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সকল বিতর্কের অবসান করা প্রয়োজন বলে মনে করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ।
একই সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির জন্য কোনো নাম প্রস্তাব না করলে দলটি মনে করে, সার্চ কমিটি সাংবিধানিক সংস্থা থেকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে জাসদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে এসব প্রস্তাব রাখেন জাসদের প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সার্চ কমিটি সাংবিধানিক সংস্থা থেকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আমরা সেখান পরিষ্কার বলেছি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ; বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সার্চ কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেয়া সমীচীন।
‘জাসদ মনে করে যে, সার্চ কমিটি গঠনে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা সমীচীন নয়। এজন্য আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। তবে একজন নারী ও একজন শিক্ষক-অধ্যাপক এই দু’জনের থাকার বিষয়ে আমি বলেছি। তবে এক্ষেত্রেও আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ভারাক্রান্ত করতে চাইনি।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে বিব্রতকর অবস্থা পাঁচ বছর পর পর হয় তার থেকে স্থায়ী সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রপতি যাতে তার ভূমিকা গ্রহণ করেন; সেই প্রস্তাবও জাসদ রেখেছে জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ভবিষ্যতে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা জন্য উনি যেন সরকারকে উপযুক্ত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের তাগিদ দেয়া থাকলেও দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও পর্যন্ত আইন প্রণীত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দল জাসদ মনে করে, তুলনামূলক যথোপযুক্ত দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সার্চ কমিটি গঠন একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া।
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার বিষয়ে সংসদকেই উদ্যোগ নিতে হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, ‘যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংবিধানের রক্ষক। সেহেতু সংবিধানের একটা নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি ভূমিকা রাখতে পারেন। আইন সরকার সংসদেই করবে, কিন্তু উনি ভূমিকা রাখবেন। সরকারকে পরামর্শ দেবেন।
‘সংবিধানের ১১৮ নং অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে সরকার যেন উদ্যোগ নেয় এজন্য রাষ্ট্রপতি সে উদ্যোগ নেয়ার এখতিয়ার রাখেন। এতদিন কেউ নেননি। সুতরা সব মহলকে বিব্রত হওয়া থেকে রেহাই দেয়ার জন্য ভবিষ্যতের জন্য এই আইনি কাঠামো করার উদ্যোগ নেবেন।’
অতীতের নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ছিলো। তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ছিলো। আপনি কি মনে করেন একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন ভালো হবে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমেই হয়েছে। কখনো বিতর্ক দেখা দিয়েছে, কখনো বিতর্ক দেখা দেয়নি।
‘সুতরাং আমরা সংলাপের মধ্যে দিয়ে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে যতদূর সম্ভব একটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে সহযোগিতা করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেছি।’
সংলাপে রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘উনি সার্চ কমিটি অবিলম্বে গ্রহণ করবেন। সার্চ কমিটি যদি নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে কোনো নাম চায় তাহলে সেখানে আপনারা সহযোগিতা করবেন। তবে সার্চ কমিটি যে দু’জন করে নাম দেবে তার থেকে উনি চূড়ান্ত করবেন।’
‘আমরা শুধু অনুরোধ করেছি, আপনি যে দক্ষতার মানুষই দেন না কেন তিনি যেন ম্যান অব ইন্ট্রিগ্রেটি হয়। কোন পেশা থেকে আসলো বা কোন মতের লোক সেটা বড় কথা নয়। যদি সৎ মানুষ হন দক্ষ মানুষ হন, গ্রহণযোগ্য হন; নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন উপহার দেবে।’
‘সংলাপকে বিএনপি নাটক বলছে’- এ সম্পর্কে জাসদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, সংলাপকে যারা নাটক বলছেন বা প্রহসন বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য বলবো; সংলাপে আসলেই না বলবেন প্রহসন না ভালো জিনিস। সুতরাং সংলাপে না গিয়ে প্রহসন বা নাটক বলা বাঞ্ছনীয় না। সংলাপে আসেন তারপর নাটক না কি অন্য কিছু তা বুঝবেন।
‘রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে যারা নাকচ করে দিচ্ছেন তারা কিন্তু সংলাপ প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে চাচ্ছেন। বানচাল করার ঘটনাটি আমরা দেখেছি। যারা নির্বাচনই বানচাল করতে চান তারা সংলাপও বানচাল করবেন। সুতরাং বিএনপি যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করেছিলো, সুতরাং তারা আগামী নির্বাচনে বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সংলাপ বানচাল করতে চাচ্ছেন’, বলেন জাসদ সভাপতি।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের জন্য দলগুলোর সাথে আলোচনার জন্য সাধুবাদ জানান ইনু।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অংশগ্রহণমূলক হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সাহায্য হবে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন জাসদ নেতারা।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, মোশাররফ হোসেন ও রেজাউল করিম তানসেন।