বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ততা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে নানান সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রান্নার নিরাপদ ও সহজলভ্য জ্বালানির অভাব। এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ প্রকৃতি থেকে পাওয়া গাছ-গাছালি, লতা-পাতা, ডালপালা, খড়-কুটা ও অন্যান্য জৈব উপাদান দিয়েই জ্বালানির চাহিদা পূরণ করতেন। এখনো গ্রামীণ নারীরা এসব প্রাকৃতিক উৎসের ওপর বেশ নির্ভরশীল। ফলে এই উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।
উপকূলীয় জ্বালানি সংকট মোকাবিলা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদ চন্ডিপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ জ্বালানি মেলা ও প্রদর্শনী। পানখালী কৃষক সংগঠন, গ্রীন কোয়ালিশন ও বারসিকের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
মেলায় আবাদচন্ডিপুর ও পানখালী গ্রামের কৃষক–কৃষাণীরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রায় ২৭৪ ধরনের প্রাকৃতিক ও কৃষিভিত্তিক জ্বালানি সংগ্রহ করে প্রদর্শন করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল—গোবরের চুলি ও ঘুটি, মশাল, মাটি–ছাই দিয়ে বানানো গুল, গাছের শুকনা ডাল, ভাসমান ঘাস, খড়–কুটা, পাতা-লতা ও নানা জৈব উপাদান। প্রদর্শনকারীরা জ্বালানি সংকটের কারণ, প্রাকৃতিক জ্বালানির গুরুত্ব এবং হারিয়ে যাওয়া উৎস পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের গ্রীন কোয়ালিশন এর কার্যকরী সদস্য আনন্দিনী মুন্ডা। উপস্থিত দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বক্তারা উপকূলীয় অঞ্চলে জ্বালানির টেকসই ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
স্থানীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মাহতাব উদ্দিন সরদার বলেন,
“জ্বালানি সংকট দিন দিন বাড়ছে। বন উজাড় করে কাঠ সংগ্রহের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার কমাতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় বিপদের মুখে পড়তে হবে।”
মেলায় আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক এর হিসাবরক্ষক বিধান মধু, ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর বরষা গাইন, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা মনিকা পাইক, ক্যাম্পেইন এন্ড নেটওয়ার্ক ফ্যাসিলিটেটর স.ম ওসমান গনী প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় নারীরা বিশুদ্ধ পানির মতোই রান্নার জ্বালানির সংকটে পড়ছেন। বন থেকে কাঠ সংগ্রহের ঝুঁকি বাড়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবন, স্বাস্থ্য, জীবিকা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। যদিও অনেক নারী জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছেন, তবুও প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সচেতনতার ঘাটতি থাকায় তারা দ্বিগুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।