কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে মাগুরায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা।।।
কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে মাগুরা জেলায় এখন উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ঢাকের তালে, শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত পরিবেশ। তবে আনন্দমুখর এই উৎসব যেন নির্বিঘ্নে উদযাপিত হয়, সে লক্ষ্যে পুরো জেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে মাগুরা জেলা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় মোট ২৬টি কাত্যায়নী পূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মণ্ডপকে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মাগুরা শহরের ছানা বাবুর বটতলা, নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম, নতুন বাজার স্মৃতি সংঘ, জামরুলতলা ও বাটিকাডাঙ্গা–শিবরামপুর চৌরাস্তা কাত্যায়নী পূজা মন্দিরসহ কয়েকটি মণ্ডপকে “অতিঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব স্থানে ২৪ ঘণ্টা টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদেরও যুক্ত করা হয়েছে নিরাপত্তা টিমে।
মহম্মদপুরের রাজাপুর রাড়িখালী দক্ষিণপাড়া, শ্রীপুরের হরিন্দি ও চাকদাহ ঋষিপাড়া এবং শালিখার কালিবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ি মণ্ডপেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, মাগুরা পৌর এলাকার সাতদোহা বেলতলা পাড়া, লক্ষিকান্দর পূর্বপাড়া, পারনান্দুয়ালী সরকারবাড়ী যুবসংঘ, বেনীপুর মধ্যপাড়া ও খালপাড়া, জামরুলতলা শিকদারবাড়ি, কুকনা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপসহ ২২টি মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব এলাকায় মোবাইল টহল টিম, গোয়েন্দা সদস্য ও ট্রাফিক ইউনিটের যৌথ টহল পরিচালনা করছে জেলা পুলিশ।
প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ এলাকায় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করবেন।
পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় “কাত্যায়নী পূজা–২০২৫ উপলক্ষে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ” শীর্ষক মতবিনিময় সভা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, বিপিএম, পিপিএম।
উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. মিরাজুল ইসলাম, পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (শালিখা সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান, জেলার সব থানার ওসি, ট্রাফিক ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা এবং পূজা উদযাপন পরিষদ ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
‘গুজব প্রতিরোধে সাইবার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে’। সভায় পুলিশ সুপার বলেন, “ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে কোনো গোষ্ঠী যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, পূজা চলাকালে জেলা কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য একটি বিশেষ মোবাইল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মাগুরা জেলা বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও পূজার সময় হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।