রাজশাহীতে চাঁদাবাজি, হামলা, মামলা, দোকান দখল ও পরিবারের নিরাপত্তার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের সামনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনী বউবাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুবেল (৪২)।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী রুবেল জানান, শালবাগান পাওয়ার হাউজ মোড়ে তিনি ‘দরিদ্র ভাংড়ি কাগজ ঘর’ নামে দোকান পরিচালনা করেন। ভাংড়ি ও পুরাতন কাগজ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র তাকে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ২০২৫ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে বিকেল ৩টার স্থানীয় দুই ব্যক্তি বাবু ও জয়নাল ভুক্তভোগী রুবেলের দোকানে এসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা জিআই পাইপ ও রড দিয়ে তাকে মারধর করে এবং দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। হামলার সময় তারা জানায়, মার্কেট সভাপতি সিজার তাকে মারার জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছেন।
আহত অবস্থায় তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং সেদিনই থানায় অভিযোগ করেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার দোকান তিন মাস বন্ধ থাকে। বড় অংকের ক্ষতি সাধন হয় তাঁর।
থানা ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরে ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে আপোষ-মীমাংসার নাম করে তাকে স্থান পরিবর্তনের শর্ত দেওয়া হয়। এরপর ড্রাম ফাউন্ডেশন থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ এবং নিজের ২০ হাজার টাকা যোগ করে মোট এক লাখ টাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে বিবাদীদের দেন রুবেল। এরপর দোকানের তালা খুলে দেওয়া হয়।
রুবেল বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ দুপুর ১টার দিকে একই চক্র পুনরায় দোকানে গিয়ে আরও এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সে সময় তিনি দোকানে না থাকলেও তার ছেলে সিয়াম ও এক কর্মচারী দোকান পরিষ্কার করছিলেন। বিবাদীরা তাদের জোর করে বের করে দেয় এবং দোকানে তাদের দুটি তালা ও পূর্বের আরও দুটি তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে তিনি ১ নং বিবাদী মার্কেট সভাপতি সিজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন,“উপরমহলের নির্দেশে তালা মারা হয়েছে।” মার্কেট সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরে ফোন রিসিভ না করে বন্ধ করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বিবাদীরা তার দোকানের মালামাল লুট করতে পারে বা দোকানে অবৈধ কিছু রেখে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে। তিনি বর্তমানে নিজে ও পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। ভুক্তভোগী রুবেলকে আইনী সহায়তা না দিয়ে থানা উলটো চাঁদাবাজদের পক্ষে মামলা গ্রহণ করে চন্দ্রিমা থানা। মামলায় রুবেলের কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের আসামী করা হয়। দোকান উদ্ধার না করেই পুলিশ পরিবারটিকে চাপে রাখেন। তিনি আরো বলেন, সিজারের বড় ভাই লিজার সৈনিক লীগের সভাপতি ছিলেন। মারামারি’র ঘটনার নামে থানায় টাকার বিনিময়ে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, তার অভিযোগ গ্রহণ এবং দোকান ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, দোকান দখন বা চাঁদাবাজির বিষয় গুলো আমি জানি না। আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। মারামারি’র ঘটনায় একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। যদি এমন হয় তাহলে তারা আসলেও তাদের দোকান ঘর উদ্ধার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্ত করে মামলা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মার্কেট সভাপতি সিজারকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।