বাংলা সাহিত্যে এই শহরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কবি দৌলত উজির বাহরাম খানের লেখা লায়লি-মজনু উপাখ্যানে। বিখ্যাত মধ্যযুগীয় কবি আলাওল ফরিদপুরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল ফতেহাবাদ। এটি একটি সু-বিকশিত নগর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি ছিল। শহরে গুরুত্বপূর্ণ মুঘল সরকারি কর্মকর্তারা, যেমন জেনারেল, বেসামরিক কর্মচারী এবং জায়গিরদারদের বসবাস ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে, সতেরো শতকে, স্থানীয় জমিদার সত্রাজিত ও মুকুন্দ মুঘল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। উনিশ শতকে আজমীর চিশতিয়া তরিকার অনুসারী সুফি সাধক শাহ ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সম্মানে শহরটির নামকরণ করা হয় ফরিদপুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং দুদু মিয়া ফরিদপুরে রক্ষণশীল ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৭৮৬ সালে ব্রিটিশরা ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠা করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল ফরিদপুর মহকুমা। ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহকুমা বর্তমান ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ জেলাগুলো (সম্মিলিতভাবে যা বৃহত্তর ফরিদপুর নামে পরিচিত) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের সময় এটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি
ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলায় গোবিন্দপুর গ্রামে পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের বাড়ি। কুমার নদীর পাশে কবির বাড়িতে রয়েছে পুরাতন ৪টি টিনের ঘর।
গেরদা ফলক
ফরিদপুর সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে গেরদা গ্রামে অবস্থিত গেরদা মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে আরবি ভাষায় লেখা পাথরের এক বিশেষ ফলক।
সাতৈর মসজিদ
ফরিদপুর জেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামে সুলতানী আমলের নয় গম্বুজ বিশিষ্ট সাতৈর মসজিদ (Satoir Mosque)।
মধুমতি নদী
মধুমতি নদী (Madhumati River) বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের উপর দিয়ে।
মথুরাপুর দেউল
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। মঠটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার।
কানাইপুর জমিদার বাড়ি
ফরিদপুর জেলা শাসনকারী জমিদারদের আছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। কানাইপুরের শিকদার বংশ তেমনি ফরিদপুরের বিখ্যাত জমিদারদের মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৪০০ বছর।
ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক
ফরিদপুর জেলা শহরের গোয়ালচামট নামক স্থানে প্রায় ১৪ একর জায়গাজুড়ে ওয়ান্ডারল্যান্ড এবং ফরিদপুর পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল।
পাতরাইল মসজিদ
পাতরাইল মসজিদ (Patrail Masjid) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। দূর্লভ ও নান্দ্যনিক কারুকার্যময় প্রাচীন মসজিদটি মজলিশ।
>ফরিদপুরের কিছু বিখ্যাত খাবার হলো:
বোয়ালমারীর ইলিশপেটি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী অঞ্চলের একটি বিখ্যাত মিষ্টি, যা ইলিশ মাছের লেজের অংশ দিয়ে তৈরি করা হয়। ফরিদপুরের আরেকটি জনপ্রিয় মিষ্টি হলো খোকা মিয়ার রসগোল্লা।
বিভিন্ন ধরনের গুড় ও পিঠা:
ফরিদপুরে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয়ভাবে তৈরি গুড় এবং ঐতিহ্যবাহী পিঠা পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
বাগাট ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার:
এই স্থানটি ফরিদপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও দই পাওয়া যায়।
বিখ্যাত ব্যক্তি
- শামসুল হক ফরিদপুরী, বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব,লেখক ও গবেষক
- অম্বিকাচরণ মজুমদার, সাবেক সভাপতি, জাতীয় কংগ্রেস
- আবদুল হক ফরিদী, শিক্ষাবিদ
- আছাদুজ্জামান মিয়া
- আ. ন. ম. বজলুর রশীদ
- ঈশানচন্দ্র সরকার
- কানাইলাল শীল, সংগীতবিদ
- খন্দকার নাজমুল হুদা
- খান বাহাদুর আবদুল গফুর নাসসাখ
- পরিমল গোস্বামী
- জাহানারা আহমেদ
- নুরুল মোমেননাট্যকার
- সুফিয়া আহমেদ
- মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিপ্লবী
- এম এ হক (কবি), সাহিত্যিক