রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকায় রাতের আঁধারে পরিকল্পিতভাবে ১১৭টি উন্নত জাতের আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার ভোরে সিন্দুর কুসুম্বী কাজীপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি আমবাগানে এ ঘটনা ঘটে। এতে দুই বছরের শ্রম, স্বপ্ন ও বিনিয়োগ এক রাতেই হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক সাইদুর রহমান। ঘটনাটি এলাকাজুড়ে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে বাগানে পৌঁছে ধ্বংসস্তূপ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন কৃষক সাইদুর রহমান। সারি সারি আমগাছ গোড়া থেকে কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ডালপালা ও পাতার স্তূপ। অনেক গাছে তখনও নতুন মুকুলের কুঁড়ি ঝুলছিল, যা দেখে চলতি মৌসুমে ভালো ফলনের আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু রাতের মধ্যেই সেই স্বপ্ন নির্মমভাবে ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইদুর রহমান জানান, দুই বছর আগে সিন্দুর কুসুম্বী মৌজায় সাড়ে ১৫ শতক জমিতে তিনি ১৩৩টি উন্নত জাতের আমগাছ রোপণ করেন। এর মধ্যে ছিল বারোমাসি, কাটিমন, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, গৌড়মতি ও বারি-৪ জাতের আমগাছ। শুরু থেকেই নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও রোগবালাই দমনে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছিলেন। ইতোমধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসায় এবছর ফল বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির স্বপ্ন দেখছিলেন।
তিনি বলেন,
“গতকালই আমগাছের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে প্রায় ৬০ কেজি রসুনের বীজ রোপণ করেছি। সব মিলিয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ভোরে এসে দেখি সব শেষ। ১৩৩টি গাছের মধ্যে ১১৭টি কেটে ফেলা হয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার বুকের ভেতর ছুরি চালিয়েছে।”
তার দাবি, গাছ, পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ শুধু আর্থিক নয়—দুই বছরের পরিশ্রম, ভবিষ্যৎ আয়ের সম্ভাবনা ও পরিবারের জীবিকার নিশ্চয়তাও একসঙ্গে ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকাটি তুলনামূলক নিরিবিলি হওয়ায় গভীর রাতে এ ধরনের নাশকতা চালানো দুর্বৃত্তদের জন্য সহজ হয়েছে। খবর পেয়ে আশপাশের কৃষক ও এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন,
“গাছের সাথে শত্রুতা থাকা উচিত নয়। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু একজন কৃষকের ক্ষতি নয়; এটি এলাকার কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কাজীপাড়া এলাকার কৃষক ইশা খান বলেন,
“এটা নিছক দুষ্টুমি নয়, পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। একজন কৃষকের জীবনের সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। আজ সাইদুর রহমান, কাল অন্য কেউ—এভাবে চলতে থাকলে কৃষিকাজে মানুষ আগ্রহ হারাবে।”
স্থানীয়দের ধারণা, ঘটনার পেছনে পূর্বশত্রুতা, জমি সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ কেউ মনে করছেন, বাগানটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় ঈর্ষা থেকেই এ নাশকতা চালানো হয়েছে। তবে এখনো প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী কৃষক সাইদুর রহমান পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে পবা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রতাপ কুমার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতা ও জমি বিরোধসহ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি।