শ্যামনগর প্রতিনিধি : ভেটখালী রায়নগর নৌ-পুলিশের অভিযানে সুন্দরবনের বনদস্যু খান বাহিনীর হাত থেকে ৫ জেলে উদ্ধার হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর শুত্রবার গহীন সুন্দরবনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভেটখালী রায়নগর নৌ-পলিশের অফিসার ইনচার্জ আক্কাস আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দক্ষিন তালপট্টীর হলদেবুনিয়ার আমড়াতলীর খালে পরিত্যাক্ত বনবিভাগের অফিসে অবস্থানরত বনদস্যু খান বাহিনীর হাত থেকে অপহৃত ৫ জেলেকে উদ্ধার করেন।
অপহৃত জেলেরা হল, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী গ্রামের জয়নাল গাজীর পুত্র বুলবুল গাজী (৩২), কৈখালী গ্রামের মৃত্যু আবুল কাশেম মোড়লের পুত্র ফজলুল রহমান (৪৫), আব্দুল মজিদ গাজীর পুত্র রেজাউল ইসলাম (৩৮), হাফিজুর রহমান (৩২), আব্দুল মজিদ কাগুচীর পুত্র আহম্মাদ কাগুচী (৪০)।
ভেটখালী রায়নগর নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আক্কাস আলী জানান, গত ৬ নভেম্বর শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিন তালপট্টীর হলদেবুনিয়া আমড়াতলীর খালে পরিত্যাক্ত বনবিভাগের অফিসে অভিযান পরিচালনা করি।আমাদের অবস্থান বুঝতে পেরে বনদস্যু খান বাহিনী ৫ জন অপহৃত জেলে এবং তাদের ব্যবহৃত নৌকা রেখে গহীন সুন্দরবনে পালিয়ে যায়।পরিত্যক্ত অফিসের মধ্যে প্রবেশ করে দেখি তারা সেখানে অজানা আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে জেলেদের অপহরন করে এই পরিত্যক্ত অফিসে মুক্তিপনের দাবীতে খান বাহিনী আটকে রাখত। অভিযান শেষ করে জিম্মী জেলেদের মুক্ত করে ফেরার পথে শনিবার আনুমানিক বিকেল ৫ টার সময় কাছিকাটার ভাসমান বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্নে পৌছালে বিজিবি কাছিকাটার ক্যাম্প কমান্ডার নুর হোসেন দ্রুতগামী একটি স্পীডবোর্ড নিয়ে আমাদের ট্রলারের কাছে এসে বলেন, আপনারা এখানে কেন ? আমি ভেটখালী রায়নগর নৌ-পলিশের অফিসার ইনচার্জ পরিচয় দিলে বিজিবির কাছিকাটা ক্যাম্প কমান্ডার নুর হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমার অনুমতি ছাড়া কেন প্রবেশ করলেন ? প্রবেশ করতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। এ সময়ে আমি বলি সুন্দরবনে পুলিশের অভিযানে জিরো পয়েন্টের বাহিরে অন্যখানে বিজিবির অনুমতি লাগে না। এ সময়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে সাইজ করবেন বলে হুমকি প্রদর্শন করেন এবং নৌ পুলিশের উদ্ধারকৃত জেলেদের অকথ্য ভাষায় বিভিন্ন গালিগালাজ করতে থাকে। লোকালয়ে এসে উদ্ধারকৃত জেলেদের শনিবার রাতেই তাদের স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হয়।
নৌ-পুলিশের খুলনা পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন বলেন, বর্ডারের ৫ কি:মি: ভিতরে প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না আমার জানা নাই। তবে কোন অপরাধীকে ধরতে কোন অনুমতি লাগে বলে আমার মনে হয় না।নীলডুমুর ১৭ বিজিবি রিভারাইন সিও লে: কর্নেল মিল্টন কবীর বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বর্ডারের ৫ কি:মি: ভিতরে প্রবেশ করতে হলে বর্ডারগার্ডকে অবশ্যই অবগত করতে হবে। বর্ডারের কোন রকম বিপদ হলে দায়ভার নিতে হবে বিজিবিকে এইটা স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ। তবে আমাদের সকল বাহিনীর সাথে একটা সুসম্পর্ক আছে এবং থাকবে। সীমান্ত ভালো থাকলে জনগন ভালো থাকবে, জনগন ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে।
বিজিবির কাছিকাটা ভাসমান ক্যাম্পের কমান্ডার নুর হোসেনের মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অপহৃত জেলেরা জানান, আমরা কৈখালী ফরেষ্ট থেকে বৈধ পারমিট নিয়ে গত ৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সুন্দরবনের অভয়ারন্য এলাকায় মাছ ধরতে প্রবেশ করি। ভারতীয় জলদস্যু বাহিনী পরিচয়ে হলদেবুনিয়া খাল থেকে মুক্তিপনের দাবিতে এ বাহিনী আমাদের আটক করে। এ সময়ে তারা মাথা পিছু ১ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে এবং শারিরিক নির্যাতন করে। বনদস্যু খান বাহিনীর ৪ জন সদস্য।এদের কাছে ২টা বন্দুক, ১টি পিস্তল ও ১টি দা রয়েছে।