ঝিনুক ডেস্ক-
আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের হাতে বল তুলে দিতেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে ভেসে উঠল উল্লাসধ্বনি। বোঝা গেল তরুণ লেগ স্পিনারকে নিয়ে ভালোই আগ্রহ তৈরি হয়েছে গত কদিনে। দর্শকদের হতাশ করেননি আমিনুল।
আন্তর্জাতিক অভিষেকে তৃতীয় বলেই উইকেট এনে দিয়েছেন দলকে। আমিনুল উইকেট পেয়েছেন নিজের পরের ওভারেও। এই উইকেটটা দুর্দান্ত ছিল। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা সুইপ করতে গিয়েছিলেন আমিনুলকে। সোজা প্যাডে চলে আসা বলটা ব্যাটে লাগাতে পারেননি—পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। চার ওভার শেষে আমিনুলের বোলিং ফিগারটা দুর্দান্ত—৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট। রঙিন অভিষেক তো একেই বলে!
আমিনুলের আকস্মিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গত কদিনে অনেক কথাই হয়েছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁকে দেখা গিয়েছে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে, তিনিই বাংলাদেশ দলে ‘চমক’ হয়ে এসেছেন একজন লেগ স্পিনার হিসেবে। বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই হন্যে হয়ে খুঁজছে একজন লেগ স্পিনার। রশিদ খানরা যেভাবে নাকাল করে ছাড়ছেন, একজন রিস্ট স্পিনারের জন্য বাংলাদেশের হাপিত্যেশ যেন তাতে আরও বাড়ছে। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বারবার নির্বাচকদের বার্তা দিয়েছেন, ‘দ্রুত একজন লেগ স্পিনার দিন।’
নির্বাচকদের মনে হয়েছে বিসিবির হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) দলে থাকা বিকেএসপির সাবেক ছাত্র আমিনুলই আপাত সমাধান। আসলেই সমাধান কিনা সেটি এখনই বলার সময় হয়নি। এই সিরিজেই তাঁর আফগান-পরীক্ষা এখনো বাদ আছে। পড়ে আছে দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। অভিষেকটা তাঁর মনে রাখার মতোই হয়েছে। বলে তেমন টার্ন নেই (অন্তত আজকের বোলিং বিচারে), খুব একটা জোরের সঙ্গেও করেন না। প্রথম ম্যাচ দেখে মনে হলো আমিনুলের মূল শক্তি ধারাবাহিক ভালো লেংথে বোলিং করে যাওয়া।
আমিনুলের লেগ স্পিনার বনে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বিকেএসপির কোচ মন্টু দত্তের। বিকেএসপির হয়ে সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা আমিনুলকে মন্টু কাজে লাগিয়েছেন খণ্ডকালীন বোলার হিসেবে। এই প্রিমিয়ার লিগের পরই আমিনুল মনোযোগী হয়েছেন বোলিংয়ে। শরীয়তপুর বাড়ি, তবে ঢাকায় বেড়ে ওঠা একজন ব্যাটসম্যানের লেগ স্পিনার বনে যাওয়ার ইতিহাস সংক্ষেপে বললেন মন্টু, ‘বিকেএসপি দলে কোনো লেগ স্পিনার ছিল না, ব্রেক থ্রু এনে দেবে, এ আশায় ওকে নিয়ে আসতাম। প্রিমিয়ার লিগে তাকে খণ্ডকালীন বোলার হিসেবেই ব্যবহার করতাম। ওখান থেকে সে বোলিংয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছে। পরে বিসিবির যে দলগুলোয় সুযোগ পেয়েছে, লেগ স্পিনে নিয়মিত হয়েছে।’
মন্টু অবশ্য আমিনুলকে শুধু লেগ স্পিনার হিসেবে দেখতে রাজি নন। তাঁর আশা, ব্যাটসম্যান সত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে আমিনুল ধীরে ধীরে হয়ে উঠবেন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার, ‘ওকে আরও কাজ করতে হবে। আরও অনেক কিছু জানতে হবে, শিখতে হবে। ওর সবচেয়ে বড় শক্তি, জায়গাটা ভালো। অনেক লেগ স্পিনার ওভারে দুটো শর্ট বল দিয়ে ফেলে। বিপ্লবের (আমিনুল) জায়গাটা ভালো, এটাই ওর শক্তি। লেগ স্পিনার হিসেবে একটু পেস বাড়াতে পারলে ভালো। তবে সে কিন্তু মূলত ব্যাটসম্যান। আমার প্রত্যাশা সে ভালো অলরাউন্ডার হয়ে উঠবে ধীরে ধীরে।’
বড় চমক হয়েই বাংলাদেশ দলে জায়গা পেয়েছেন আমিনুল। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্নায়ুচাপ সরিয়ে আজ বল হাতেও কম চমকে দেননি ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার। তাঁর চ্যালেঞ্জ এটাই—সামনেও ধরে রাখতে হবে এই পারফরম্যান্স। না হলে হারিয়ে যেতে হবে বিস্মৃতির অতলে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে নির্বাচকদের পছন্দ!